পুলিশ সুপার হিসেবে সিলেটে যোগ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম। এডিশনাল ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বিদায় নিচ্ছেন সিলেট থেকে। নতুন কর্মস্থল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে কয়েক দিনের মধ্যেই সেখানে যোগ দেবেন। বিদায় নেয়ার আগে সিলেটের মুক্তিযোদ্ধারা বিরল সম্মান দিয়েছেন পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনকে।
এর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে এমন সম্মাননা পাননি কোন পুলিশ কর্মকর্তারা। দায়িত্ব পালনকালে মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া সম্মানের প্রতিদান হিসেবে বিদায়ী পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনকে সম্মানিত করেছেন তারা।
সিলেটে প্রায় তিনবছর দায়িত্ব পালনকালে ফরিদ উদ্দিন চেষ্টা করেছেন জেলা পুলিশকে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার। চেষ্টা করেছেন ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এই স্লোগানটি মানুষের বিশ্বাসে পরিণত করাতে। করোনা মহামারি ও গেল ভয়াবহ বন্যায় সিলেটে অসহায় মানুষের কাছে ‘ত্রাতা’ হয়ে দাঁড়ায় জেলা পুলিশ। লকডাউনের সময় গৃহবন্দী মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার নিয়ে ছুটে চলেন পুলিশ সদস্যরা। বন্যার সময় ‘এক মানবিক পুলিশ বাহিনীর’ দেখা পায় সিলেটবাসী।
নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্থানে স্থানে আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসে পুলিশ। পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশে একদিকে চলে উদ্ধার তৎপরতা, অন্যদিকে চালানো হয় ত্রাণ কার্যক্রম। বন্যা আক্রান্ত এলাকাগুলোতে প্রায় দুইমাস চলে এই ত্রাণ কার্যক্রম। এতে সিলেটের সাধারণ মানুষ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব কমে আসে। ফলে কমে আসে অপরাধপ্রবণতাও।
এদিকে, পুলিশ সুপারের দায়িত্ব নিয়ে সিলেট এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করার উদ্যোগ নেন মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। মুজিববর্ষে সিলেট জেলা পুলিশের আওতাধীন সকল থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়। একই রকম চেয়ার স্থাপন করা হয় পুলিশ সুপার কার্যালয়েও। মুক্তিযোদ্ধারা কোন কাজে গেলে বিশেষ ওই চেয়ারে বসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের কাজ সম্পাদন করার নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। ফরিদ উদ্দিনের এই উদ্যোগকে সম্মান জানান মুক্তিযোদ্ধারা।
এছাড়া ৭ আগস্ট সিলেট জেলা পুলিশ লাইন্সে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মরণে উদ্বোধন করা হয় ‘স্মৃতি ৭১’ স্মৃতিস্তম্ভ। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ সদস্য ও মুক্তিকামী গণমানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গণকবরের পাশে এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করেন পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করায় বিদায়কালে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনকেও বিশেষ সম্মাননা জানিয়েছেন সিলেটের মুক্তিযোদ্ধারা। গত বুধবার বিকেলে নগরীর মাছিমপুরস্থ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের হলরুমে জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে তাকে বিরল সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সংবর্ধনাকালে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ আমাদের গর্ব ও অহংকার। পুলিশ বিভাগে আদর্শবান অনেক জনবান্ধব কর্মকর্তা রয়েছেন। সিলেটের বিদায়ী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন তাদেরই একজন। তার মতো সকল কর্মকর্তা হলে পুলিশ সত্যিকার অর্থে জনগণের বন্ধু হয়ে ওঠবে। ফরিদ উদ্দিন প্রকৃত পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবিত একজন কর্মকর্তা। তিনি সিলেটের মুক্তিযোদ্ধাদের যে সম্মান জানিয়েছেন, তা সরকারি অন্য কর্মকর্তারা অনুসরণ করতে পারেন।’
সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েলের সভাপতিত্বে ও সাংস্কৃতিক কমান্ডের আহ্বায়ক আংশুমান দত্ত অঞ্জনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন থানা ইউনিটের কমান্ডাররা বক্তব্য রাখেন। মুক্তিযোদ্ধারা ফরিদ উদ্দিনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। এছাড়া ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী তার হাতে তুলে দিয়ে সম্মান জানান।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর