চট্টগ্রামে দিন দিন বেড়েই চলেছে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য। অলিগলি পেরিয়ে মূল সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব রিকশা। নিয়ন্ত্রণহীন রিকশায় নিত্য ঘটছে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা। ব্যাটারিচালিত রিকশায় ব্যবহার করা হয় ২৩০ ভোল্টের ব্যাটারি। চার্জ দেওয়া হয় অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন ব্যবহার করে। তবে বন্দরনগরীর সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে না- দাবি ট্রাফিক পুলিশের। তাদের বক্তব্য, ‘আমরা অভিযান চালানোর পরও হয়তো দু-একটি চুরি করে চলে।’
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা জানান, এসব রিকশায় দুই ধরনের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে কেউ কেউ ১৩০ ভোল্টের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করে। আবার কেউ ২৩০ ভোল্টের ক্ষমতার ব্যাটারি ব্যবহার করে। এ দুই ধরনের ব্যাটারি চার্জ দিতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বাকি টাকা গ্যারেজ মালিকের মুনাফা। গ্যারেজ মালিকরা পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে এসব রিকশা চালাচ্ছেন। তবে নগরীর মূল সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আসফিকুজ্জামান আকতার। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে চলে না, আমরা চলতে দিই না। কারণ আমরা অভিযান চালাই। এখন যদি চুরি-চামারি করে একটা দুটা চলে, এটা যদি আপনার রিপোর্ট করতে মন চায় করেন, সমস্যা নেই। কিন্তু আমার জানামতে চলে না। আমরা প্রতি মুহূর্তে অভিযান চালাই, আপনারা পুলিশ লাইনে গিয়ে দেখবেন, কতগুলো আটক আছে।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের চারটি জোনে ভাগ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না এমন সড়কের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়েছে যথাযথ নির্দেশনা। তবে সরেজমিন দেখা গেছে, সিএমপির এসব নির্দেশনা মানছে না ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো। নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কেই চলছে এসব রিকশা। বেশির ভাগ সময় ব্যাটারি রিকশা মূল সড়কে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। দিনে শহরের গলিপথগুলোতে এসব রিকশা চলাচল বেশি করলেও সন্ধ্যা হলেই রাজপথ দাপিয়ে বেড়ায়। ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে বিভিন্ন সময় এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের দাবি উঠলেও তা বন্ধ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। বিদ্যুৎ ঘাটতির সময়ে অবৈধ এই যানবাহন চলতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হচ্ছে না। এ ছাড়া এই বাহন নিরাপদও নয়। সাধারণ রিকশার অবকাঠামো কিছুটা পরিবর্তন করে তৈরি এসব রিকশা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। এতে প্রায়ই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে।
ট্রাফিক উত্তর জোনের আওতাভুক্ত সড়কগুলো হচ্ছে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বহদ্দারহাট হয়ে দামপাড়া পুনাক ক্রসিং পর্যন্ত এবং ষোলশহর ২ নম্বর গেট থেকে প্রবর্তক মোড় ও গোলপাহাড় হয়ে জিইসি পর্যন্ত এবং জাকির হোসেন রোডে ওয়্যারলেস মোড় থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত। দক্ষিণ জোনে দামপাড়া পুনাক থেকে টাইগারপাস হয়ে নিউমার্কেট কোতোয়ালি, নিউমার্কেট থেকে জুবিলি রোড কাজীর দেউড়ি, আলমাস হয়ে ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার থেকে জামাল খান হয়ে আন্দরকিল্লা মোড়, গনি বেকারি মোড় হয়ে চট্টগ্রাম কলেজ, কেয়ারি মার্কেট, গুলজার মোড়, অলি খাঁ মোড়, চট্টগ্রাম মেডিকেল জরুরি বিভাগের গেট পর্যন্ত। পশ্চিম জোনে দেওয়ানহাট থেকে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়, এক্সেস রোড, ডিটি রোড। বন্দর জোনে বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, কর্ণফুলী টানেল গোলচত্বর, আকমল আলী রোডের মাথা এবং লিংক রোডের প্রধান সড়ক।