পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে পলাতক এসব ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিন দফায় এ আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।
এনসিবি জানায়, শিগগিরই ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিস’ জারি হচ্ছে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে। আর এ ওয়ারেন্ট কপি চলে যাবে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল)-এর সদস্য ১৯৬টি দেশের এনসিবি দপ্তরে। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই ১২ জনের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি ওয়ারেন্ট থাকায় আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল)-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রত্যেকের নাম শিগগিরই ঝুলানো হবে। তারা বলেছেন, জুলাই-আগস্টের গণহত্যা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিশ্বের প্রথম সারির গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ পেয়েছে। খোদ ইন্টারপোলের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে অবগত।
জানা গেছে, বিদেশে পলাতক ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিনটি ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা ও বেনজীর আহমেদ ছাড়া অন্য ১০ জনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে এনসিবি থেকে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয় ১০ এপ্রিল। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে নথিপত্রসহ চিঠি পাঠায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করতে রেড অ্যালার্ট জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করতে গত বছরের নভেম্বরে পুলিশ সদর দপ্তরকে অনুরোধ করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়। ওই মাসেই এনসিবি, ঢাকা ইন্টারপোলে রেড নোটিসের জন্য আবেদন করেছিল। আরও জানা গেছে, আদালত, প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এনসিবি, ঢাকা রেড নোটিস জারির ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আবেদন করে থাকে। সম্প্রতি করা আবেদনগুলোতে অনেকের বর্তমান অবস্থানকারী দেশের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ এবং বন্দি বিনিময় দুটো চুক্তিই রয়েছে। এজন্য ভারত সরকার চাইলে যে কাউকেই এসব চুক্তির আওতায় হস্তান্তর করতে পারে। শেখ হাসিনাসহ যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) ইনামুল হক সাগর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করতে ইন্টারপোল সহযোগিতা করে থাকে। অন্যদিকে বিদেশে পলাতক ব্যক্তিদের সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে সেটিও সংশ্লিষ্ট দেশ ইন্টারপোলকে জানায়। যে ১২ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির আবেদন করা হয়েছে, সেগুলো এখন ইন্টারপোলে প্রক্রিয়াধীন।
গতকাল ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, মোট ৬ হাজার ৫৮৩ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করা আছে। এর মধ্যে ৬২ জন বাংলাদেশি। তবে রেড নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে সম্প্রতি আবেদন করা ১২ জনের কারও নাম তালিকায় নেই।
ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিস জারির তালিকায় থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে আছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুবাইয়ে পলাতক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান, শীর্ষ সন্ত্রাসী ফেরদৌস জাহাঙ্গীর ওরফে কালা জাহাঙ্গীর, শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ, শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি প্রমুখ। তালিকায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের নাম ও ছবি রয়েছে।