দুটি কুঁড়ি একটি পাতার শহর সিলেট। পাহাড় ও চা বাগান পরিবেষ্টিত সিলেটকে পুণ্যভূমিও বলা হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে ২৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে দেশের পঞ্চম বৃহত্তম নগরী সিলেট। অনিন্দ্যসুন্দর পাহাড়ঘেরা শহরে আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট। ভেন্যু সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। যা বিশ্বের অন্যতম সুন্দর স্টেডিয়ামগুলোর একটি। স্টেডিয়ামটি সিলেট শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে লাক্কাতুরা চা বাগানের ভিতরে। সবুজ বনানী ও চা বাগানের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করতে হয় স্টেডিয়ামে। আন্তর্জাতিক এ ভেন্যুতে নিয়মিত টি-২০ ও ওয়ানডে হলেও এখন পর্যন্ত টেস্ট হয়েছে তিনটি। বাংলাদেশ তিন টেস্টে অংশ নিয়ে একটি জিতেছে এবং হেরেছে দুটি। ১৩ মাস পর আজ সিলেট ভেন্যুর চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। চলতি বছর যা টাইগারদের প্রথম টেস্ট। নতুন বছরের প্রথম টেস্টে নতুন কিছু দেখার ইঙ্গিত দিলেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল। নতুন স্বপ্ন নিয়ে খেলার কথা বলেন, ‘টেস্ট দলটায় একটা সংস্কৃতি তৈরি করতে পারি, কীভাবে খেলাটা খেলতে চাই, এ বিষয়গুলো নিয়ে গত বছর থেকেই কথাবার্তা হচ্ছিল। নতুন কোচের একটা পরিকল্পনা আছে, সে আসলে কীভাবে দলটাকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে চায়, যেগুলো এরই মধ্যে
ক্রিকেটারদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তিনি। পাশাপাশি আমরা যারা খেলছি, আমাদের একটা ইনপুট তো ছিলই। আমি
আশা করব এ বছর যে পাঁচ-ছয়টা টেস্ট ম্যাচ আছে, নতুন কিছু আপনারা দেখতে পাবেন ইনশাল্লাহ। আমরা নতুন স্বপ্ন নিয়ে খেলতে নামব।’
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের অভিষেক ২০১৮ সালের নভেম্বরে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটিতে বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম অসাধারণ বোলিং করেছিলেন। দুই ইনিংসে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন। এবারও টাইগার বোলিংয়ের অন্যতম সেরা অস্ত্র তাইজুল। যদিও টাইগার কোচ ফিল সিমন্স তার ৬২তম জন্মদিনের দিন মিডিয়ার মুখোমুখিতে জানিয়েছিলেন স্পিন উইকেট চান না। কিন্তু ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে ১৫০ রানের জয় পেয়েছিল নাজমুল বাহিনী, ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তাইজুল। সিলেটের মাটিতে ৩ টেস্টে তাইজুলের উইকেট ২৪টি। এ মাঠে বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল ২০২৪ সালের মার্চে। শ্রীলঙ্কার কাছে ৩২৮ রানের পাহাড়সমান ব্যবধানে হেরেছিল ব্যাটিং ব্যর্থতায়।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল ২০২১ সালে হারারেতে। ২২০ রানে জয়ী ওই টেস্টে অবসরের ঘোষণা দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অবসরের ঘোষণা দেন ১৫০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে। আফ্রিকান দেশটির বিপক্ষে এবার ১১তম টেস্ট সিরিজ
খেলবে টাইগাররা। আগের ১০ সিরিজ দুই দল চারটি করে জিতেছে এবং ড্র হয়েছে দুটি। পরম্পরের বিপক্ষে মোট টেস্ট খেলেছে ১৮টি। বাংলাদেশের আট জয়ের
বিপরীতে জিম্বাবুয়ের সাতটি। তিনটি টেস্ট ড্র হয়েছে। সর্বশেষ ১০ টেস্টেও সাতটি জিতেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে এবারও ফেবারিট নাজমুল বাহিনী।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শরীরী ভাষায় পরিবর্তন চাইছেন টাইগার অধিনায়ক। গত বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ১০টি খেলে জিতেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২টি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি। বাকি ৭ টেস্টেই হার। চলতি বছর ছয়টি টেস্ট খেলবে এবং নিজেদের নতুনভাবে উপস্থাপন করতে চান নাজমুল। অতীত মানসিকতার ব্যারিয়ার ভেঙে নতুন করে খেলতে চান টাইগার অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে আমি যেটা চিন্তা করি আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচ যেন জেতার জন্য খেলি। কোনো স্বার্থবাদী ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা আমাদের কারও নেই। একটু আগেও বললাম যে, আমরা নতুন কিছু চেষ্টা করব। এটা শুরু হবে আগামীকাল (আজ) থেকে। ওটার জন্য যে ধরনের মনমানসিকতা, প্রস্তুতি থাকা দরকার ক্রিকেটাররা তা নিচ্ছে। পাশাপাশি আমি আশা করব যারা ম্যানেজমেন্টে আছেন বা যারা ক্রিকেট বোর্ডে আছেন, তারাও আমাদের এ বিষয়গুলো নিয়ে সহযোগিতা করবেন।’ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অধিনায়কত্বের মেয়াদ শেষ হয়েছিল নাজমুল শান্তর। নতুন করে তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নতুন নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ে সিরিজই নাজমুলের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট।