সরকারি আইনে সড়কে বেপরোয়া ও বিপজ্জনক গতিতে মোটরযান চালানো দণ্ডনীয় অপরাধ। তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতেও এটি বহু জঘন্য অপরাধের সমন্বয়ক। কারণ ইসলাম বেপরোয়া জীবনযাপন সমর্থন করে না। বরং এটি আধ্যাত্মিকভাবে মানুষের ঈমান-আমলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এখানে ইসলামের আলোকে বেপরোয়া গতিতে মোটরযান চালানো নিষিদ্ধ হওয়ার কয়েকটি কারণ তুলো ধরা হলো—
জানমাল হেফাজতের নির্দেশনা লঙ্ঘন : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।’ (সুর : নিসা, আয়াত : ৪)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে হত্যা কোরো না।
এর দ্বারা উদ্দেশ্য আত্মহত্যাও হতে পারে, যা মহাপাপ; পাপ করাও হতে পারে, কেননা তা-ও ধ্বংসের কারণ হয়। আবার কোনো মুসলিমকে হত্যা করাও হতে পারে। সবই মহান আল্লাহ তাআলা নিষিদ্ধ করেছেন।
বেপরোয়া গতিতে মোটরযান চালকের যেকোনো একটি ঘটানোর আশঙ্কা খুব বেশি থাকে, যা মহান আল্লাহ কর্তৃক নিজেদের জানমাল হেফাজতের আদেশের লঙ্ঘন।
অন্যদের কষ্ট দেওয়া : বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের মাধ্যমে পথচারী, অন্যান্য চালক, এমনকি যাত্রীদের কষ্ট ও বিপদের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়, যা ইসলামে নিষেধ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২৭)
অহংকার প্রদর্শন : অনেক সময় বেপরোয়া মোটরযান চালানোর পেছনে থাকে অহংকার, আত্মপ্রদর্শন ও ক্ষমতা জাহিরের মানসিকতা, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৬)
আমানতের খেয়ানত হয় : চালকের জীবনটা যেমন তার কাছে রাখা আল্লাহর আমানত, তেমনি চালকের যাত্রীদের নিরাপত্তাও তার ওপর অর্পিত আমানত। বেপরোয়া মোটরযান চালালে এসব ধরনের আমানতই হুমকির মুখে পড়ে। অথচ মহান আল্লাহ আমানত রক্ষার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)
অন্যের ক্ষতির কারণ : বেপরোয়া গতিতে মোটরযান চালানো সর্বাবস্থায় নিজের ও অন্যের ক্ষতির কারণ। কাউকে অ্যাকসিডেন্ট করে দিলে সেটা হয় বড় আকারে, যে ক্ষতির যৌক্তিক পূরণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও তার পরিবার হয়তো এই চালককে সারা জীবনে মাফ করার কোনো কারণ খুঁজে পায় না, যা অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয়। কারণ চালক এখানে বান্দার যে হক নষ্ট করে, তা ওই লোক ক্ষমা করার আগ পর্যন্ত মাফ হবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সেইদিন আসার আগে যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তার কাছ থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯)
এই হাদিসটিতে নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের বান্দার হকের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। বান্দার হক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যদি কোনো ব্যক্তি কারো হক নষ্ট করে তার কোনো রকম সুরাহা না করেই দুনিয়া থেকে চলে যায়, তাহলে পরকালে তাকে এর চরম মূল্য দিতে হবে। সেদিন মানুষের কাছে এমন কোনো অর্থ-সম্পদ থাকবে না, যা দ্বারা সে তার ভাইয়ের হক আদায় করে দেবে, থাকবে শুধু আমলনামা। কারো কাছে যদি নেক আমল থাকে, তাহলে তার আমলনামা থেকে নেক আমল কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, আর যদি নেক আমল না থাকে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির বদ আমলের বোঝা মাথায় নিতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/মুসা