মুনাফিকি বা কপটতা গর্হিত অপরাধ। বাহ্যিকভাবে মুসলমান পরিচয় বহনকারী কিছু লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মুনাফিক হিসেবে পরিচিত ছিল। এমন স্বভাবের লোক পরবর্তী যুগে থাকাও অস্বাভাবিক নয়। তবে এমন কিছু কাজ আছে, যা করলে মুনাফিকি থেকে মুক্ত হওয়া যায়।
নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো—
৪০ দিন একাধারে জামাতে নামাজ
পড়া : আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রথম তাকবিরপ্রাপ্তিসহ একাধারে ৪০ দিন (পাঁচ ওয়াক্ত সালাত) জামাতে আদায় করবে তার জন্য দুটি মুক্তিপত্র লিখে দেওয়া হবে। একটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি, দ্বিতীয়টি মুনাফিকি থেকে মুক্তি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১)
সদাচার ও দ্বিন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি আচার কোনো মুনাফিকের মধ্যে মেলে না—সদাচার ও দ্বিন সম্পর্কিত জ্ঞান।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮৪)
দানশীলতা : আবু মালিক আল আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।
একবার ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ উচ্চারণে দাঁড়িপাল্লা (সওয়াবে) ভরে যায়; আর ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলায় আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সমুদয় স্থান (সওয়াবে) ভরে যায়। (মানুষের জন্য) সালাত হলো আলো, দান হলো প্রমাণ এবং ধৈর্য হলো জ্যোতি। আর কোরআন মাজিদ (কিয়ামতে) হয় তোমার পক্ষে প্রমাণ হয়ে দাঁড়াবে অথবা তোমার বিরুদ্ধে। ভোর বেলায় (ঘুম থেকে জাগরণের মাধ্যমে) প্রত্যেক মানুষ নিজেকে (আমলের নিকট) বেঁচে দেয়।
তারপর ভালো আমলের মাধ্যমে হয় সে নিজকে মুক্ত করে অথবা খারাপ আমলের মাধ্যমে নিজকে ধ্বংস করে। (মুসলিম, হাদিস : ২২৩)
আল্লাহর পথে সংগ্রাম : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে লড়াই না করে অথবা এর জন্য সংকল্প না করে মারা যাবে, সে মুনাফিকির একটি শাখার ওপর মারা যাবে।’
(মুসলিম, হাদিস : ১৯১০)
বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা : ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার কথা বেশি বেশি স্মরণ করলে মুনাফিকি থেকে মুক্তি মেলে। কেননা মুনাফিকরা আল্লাহকে কম স্মরণ করে। আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের এমন আচরণ সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।
(সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪২)
মুনাফিকি থেকে আশ্রয় চাওয়া : যেকোনো অকল্যাণ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া মুমিনের অন্যতম হাতিয়ার।
মুমিন আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করবে তার মধ্যে মুনাফিকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার দোয়াও শামিল রাখবে।
তাবেঈ জুবাইর ইবনে নুফাইর (রহ.) বলেন, আবু দারদা (রা.) হিমসে থাকা অবস্থায় একবার আমি তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করলাম। তিনি তখন মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। তিনি যখন বৈঠকে বসলেন, তখন তাশাহুদের পর আল্লাহর কাছে মুনাফিকি থেকে বেঁচে থাকার দোয়া করতে লাগলেন। নামাজ শেষ করার পর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সঙ্গে মুনাফিকির তো কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে আপনি এই দোয়া করছেন কেন? তখন তিনি আল্লাহর কাছে তিনবার ক্ষমা চেয়ে বলেন, কে এই বিপদ থেকে মুক্ত আছে? আল্লাহর কসম একজন মানুষ যেকোনো সময় ফিতনায় পড়ে দ্বিন থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতে পারে।
(শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৮৩১)
নবীজি (সা.) দ্বিনের ওপর অটল থাকতে এই দোয়া বেশি পাঠ করতেন—
উচ্চারণ : ‘ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলুবি ছাব্বিত কলবি আলা দ্বিনিক।’
অর্থ : হে মনের পরিবর্তনকারী, আমার মনকে দ্বিনের ওপর স্থির রাখুন।
(তিরমিজি, হাদিস : ৩৫২২)