গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থনীতি বিশ্লেষক এম জাকির হোসেন খান বলেছেন, ঢাকা শহরের বাতাসে দূষণের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। অক্সিজেন কমছে। শ্বাস নেওয়াই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার বাতাসের দূষণ কমানো ও অক্সিজেন বাড়াতে বাঁশ বনায়ন সর্বোত্তম সমাধান হতে পারে।
তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাধারণ বনের চেয়ে বাঁশবন ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ বেশি অক্সিজেন দেয় ও কার্বন শোষণ করে ৫-৬ গুণ বেশি। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে বাঁশ। শহরাঞ্চলের যেসব ছোট ছোট জায়গায় বড় গাছ লাগানো সম্ভব না, সেখানে অনায়াসে বাঁশঝাড় তৈরি করা যায়। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে বাঁশের বিকল্প নেই।
বাঁশ প্রতিদিন এক মিটার পর্যন্ত বাড়ে, যা অন্য কোনো গাছের বেলায় হয় না। ২-৩ বছরেই বাঁশ বড় হয়ে যায়। কেটে ফেললে নিচ থেকে আবার বাঁশ হয়। এক হেক্টর জমির সাধারণ বন বছরে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে গড়ে ২ থেকে ১২ টন। সেখানে বাঁশবন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে ১২ থেকে ৬০ টন। ঢাকা শহরের পরিবেশ রক্ষায় টেকসই সমাধান হতে পারে বাঁশ। যেখানে বড় গাছ লাগানোর সুযোগ আছে, সেখানে বড় জাতের গাছ লাগাতে হবে। কাঠ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে এটা দরকার। যেখানে বড় গাছ লাগানোর জায়গা নেই যেমন- ছোট ছোট হিট আইল্যান্ড, ছাদে, ভবনের পাশে, সড়ক বিভাজকে, পার্কে, খালের পাড়ে বাঁশবন গড়ে তোলা যায়। শহরাঞ্চলে বর্তমানে অনেক কাচের ভবন তৈরি হচ্ছে। এগুলো প্রচুর তাপ শোষণ করে ও ধরে রাখে। ভার্টিক্যাল গার্ডেনিংয়ের মাধ্যমে ভবনগুলো বাঁশ দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায়। এতে ভবনগুলোর তাপধারণ যেমন কমবে, তেমনি এয়ারকন্ডিশনের ব্যবহার কমবে, বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, আশপাশের পরিবেশও ঠান্ডা থাকবে। এ ছাড়া বাঁশবনে বিভিন্ন পাখি, পোকামাকড় ও প্রাণীর আবাস হয়, যেগুলো মশা খেয়ে ফেলে। এজন্য কাচের ভবন করলে পাশে বাঁশ বনায়ন বাধ্যতামূলক করতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, বাঁশ দিয়ে ঝুঁড়ি, আসবাবপত্রসহ হাজারটা পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি হয়। যত বেশি বাঁশ লাগানো যাবে, তত বেশি ইকোপণ্য তৈরি হবে। বাঁশকেন্দ্রিক অর্থনীতিও যেমন গড়ে উঠবে। এতে প্লাস্টিকের মতো ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহার কমবে।