জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতা, শারীরিক নির্যাতন এবং বিচারহীনতার ফলে বাংলাদেশে একটি গভীর মানসিক স্বাস্থ্য সংকট তৈরি হয়েছে—এমন পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে এক গোলটেবিল বৈঠকে। এই সংকট চিহ্নিত ও উত্তরণের পথ অনুসন্ধানে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি, বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ, ব্রিটিশ-বাংলাদেশ সাইকিয়াট্রিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি যৌথভাবে আয়োজন করে ‘Mental Health in Crisis: Addressing psychiatric challenge in post-July Bangladesh’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক।
শনিবার বিকাল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ড. আবদুল্লাহ ফারুক কনফারেন্স হলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিউবিটি-র লেকচারার রাজিব মন্ডল।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশ সাইকিয়াট্রিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ডা. আনিস আহমদ মূল বক্তব্যে বলেন, ‘Violence begets violence, justice is part of therapy।’ রাষ্ট্রের নির্যাতনের ফলে যে মানসিক ট্রমা তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিও ট্রমা কাটাতে সহায়ক হতে পারে।’ প্রতিবছর মেন্টাল হেলথ নিয়ে কার্যক্রম চালানোর ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম (অপু) বলেন, গত কয়েক বছরে অপশাসনের ফলে বহু মানুষ ট্রমার শিকার হয়েছেন। যেহেতু এই নির্যাতনে রাষ্ট্র জড়িত, তাই রাষ্ট্রকে ক্ষমা চাইতে হবে।
ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুস্তাকীম ফারুকী বলেন, দেশে সাইকিয়াট্রিস্টদের কার্যকর প্রশিক্ষণের জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। সরকারকে এই দিকটিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।
এক্টিভিস্ট নাফিসা সাকাফি জানান, যারা শহীদ ও আহতদের নিয়ে কাজ করছেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি হয়েছে। এদের জন্য মনো-পরামর্শ প্রদান অপরিহার্য।
জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সাদিক আল আরমান জানান, শারীরিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করার কারণে আমি দীর্ঘমেয়াদি ট্রমায় ভুগছি। আন্দোলনের নেতৃত্বের দুর্বলতা আন্দোলনকারীদের মধ্যে রাগ ও হতাশা তৈরি করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম শাহীন বলেন, রিকনসিলিয়েশন তখনই সম্ভব, যখন নিপীড়করা তাদের কাজের জন্য ক্ষমা চাইবে। তিনি জানান, ফ্যাসিবাদ আমলে ভিক্টিমদের নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করা হবে এবং একটি মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট সেল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেখানে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সেবা প্রদান করা হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল