কৃষির জন্য যে আদর্শ মাটির দরকার সেই জৈব উপাদানের পরিমাণ বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে দিন দিন কমছে। আবাদি জমিতে জৈব উপাদানের হার ৫ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও সেই হার কমে ০.৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) ‘ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। যদিও সেই সমীক্ষাটি চালানো হয় ২০২০ সালে। এরপর বিছু এলাকায় ফলোআপ করা হলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। কিছু এলাকায় আবাদি জমির উর্বরাশক্তি আরও কমেছে বলে দাবি এসআরডিআইয়ের।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এলাকা ভেদে পরীক্ষার কাজ হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, অঞ্চল ভেদে মাটিতে জৈব উপাদানের হার ১-০.৫ এর মধ্যে। কোনো কোনো এলাকায় তারও কম। কারণ হিসেবে তিনি জানান, মাটিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাব প্রকট। এ ছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে পানির সমস্যা আছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক মাটিতে তীব্র খরায় ফেটে যায়। মাটিতে অম্লতাও বেড়েছে। অতিরিক্ত ইউরিয়া ও সালফার জাতীয় সার ব্যবহার করার ফলে মাটি তার উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, রাজশাহী জেলাতে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে উঁচু জমির পরিমাণ ১ লাখ ২৮ হাজার ৯১৬ হেক্টর, মাঝারি উঁচু জমি আছে ৫৩ হাজর ৭০৪ হেক্টর, নিচু জমি আছে ১০ হাজার ৬০৯ হেক্টর, মাঝারি নিচু জমির পরিমাণ ২৯ হাজার ৯২৮ হেক্টর, অতি নিচু জমি আছে ১৯ হাজার ৩৮৩ হেক্টর।
পবার কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, উপজেলার অধিকাংশ আবাদি জমিতে জৈব পদার্থের উপস্থিতির গড় হার ০.৫ শতাংশ। তবে কোনো কোনো স্থানে জৈব পদার্থের উপস্থিতি ১ শতাংশের বেশি আছে। মাটির অর্গানিক ম্যাটারিয়াল ৪৫ শতাংশ, পানি ২৫ শতাংশ, বাতাস ২৫ শতাংশ ও জৈব উপাদান ৫ শতাংশ। এর মধ্যে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে জৈব পদার্থ। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে জৈব পদার্থের উপস্থিতি কমছে। এতে হ্রাস পাচ্ছে জমির উর্বরতা ক্ষমতা।
কৃষিবিজ্ঞানী রবিউল আলম জানান, রাজশাহী অঞ্চলে জমির উর্বরতা শক্তি দিন দিন কমছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে গোবর সার ব্যবহার করা হতো। খেতে ফসল তোলার পর উচ্ছিষ্টগুলো সেখানেই থাকত। যা জমিতে পচে সার হয়ে যেত। এখন কিছু রাখা হচ্ছে না।
উৎপাদন বাড়াতে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপিসহ বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে, যা জমির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, জেলার অঞ্চল ভেদে ১ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি এখনো আছে। কৃষকরা মাটির ধরন বুঝে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে না। সারের সুষম বণ্টন না হলে এবং নিয়মিত জৈব সার ব্যবহার না করার কারণে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়।