পরিশুদ্ধ হৃদয় বা ‘ক্বলবে সালিম’ বলতে বোঝানো হয় শিরক ও সন্দেহমুক্ত, বিদআত ও গুনাহমুক্ত, ঈমান, একনিষ্ঠতা, আল্লাহর ভালোবাসা, আস্থা ও ভয়ে পরিপূর্ণ হৃদয়, যা একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মুমিন হতে সাহায্য করে। সার্বক্ষণিক আল্লাহর রহমত বেষ্টিত করে রাখে।
ইহকাল ও পরকালীন মুক্তি ও সফলতার জন্য হৃদয়ের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। কেননা নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, “জেনে রেখো, দেহের মধ্যে এক টুকরা গোশত আছে।
যখন তা সুস্থ থাকে তখন সমস্ত দেহই সুস্থ থাকে। আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন সমস্ত দেহই নষ্ট হয়ে যায়। স্মরণ রেখো, তাহলো ‘ক্বলব’ হৃদয়।” (মুসলিম, হাদিস : ৩৯৮৬)
তাকওয়ার ভিত্তি হলো হৃদয়। হৃদয় পরিশুদ্ধ হলে এবং তাতে তাকওয়া থাকলে তা মানুষের কাজকর্মেও প্রকাশ পায়। সুতরাং বলা যায় যে তাকওয়াপূর্ণ পরিশুদ্ধ হৃদয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর দরবারে সবচেয়ে সম্মানিত সে, যে অধিক তাকওয়াবান।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার তাকওয়ার পরিমাপ করেন হৃদয় দেখে।
তবে (সাফল্য লাভ করবে সেই ব্যক্তি) যে বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে।’ (সুরা : আশ-শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)
তাই মুমিনের উচিত পরিশুদ্ধ অন্তর লাভে অন্তরের পরিচর্যা করা। শুধু কুফর-শিরকমুক্ত হওয়াই পরিশুদ্ধতার পরিচায়ক নয়, পাশাপাশি মুমিনদের প্রতি আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও দয়াও পরিশুদ্ধ অন্তরের বৈশিষ্ট্য, যে অন্তরে থাকবে না কোনো বিদ্বেষ কিংবা কৃপণতা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ আনসারদের পাকাপোক্ত ঈমান ও পরিশুদ্ধ অন্তরের সুনাম করে বলেছেন, ‘আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদিনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালোবাসে। আর মুহাজিরদের যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না। এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৯)
অন্তরের পরিশুদ্ধতা এতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে পরিশুদ্ধ ও বিদ্বেষমুক্ত অন্তর ছাড়া আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া যায় না। যখন দয়া করে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সাধারণ ক্ষমা করেন, তখনো অন্তরে বিদ্বেষ পোষণকারী দুর্ভাগারা সে ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবারে জান্নাতের দরজাগুলো খোলা হয়। তখন আল্লাহ প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করে না। তবে সেই ব্যক্তি ব্যতিক্রম, যার সঙ্গে তার ভাইয়ের শত্রুতা থাকে। তখন বলা হয়, এ দুজনকে সময় দাও, যতক্ষণ না তারা মীমাংসা করে।’
(মুসলিম, হাদিস : ৬৪৩৮)
মহান আল্লাহ আমাদের সবার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দিন। ঈমানের আলোয় আলোকিত করে দিন।