বাবা ফয়সল আরেফিন দীপনের লাশ যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে জানাজার অপেক্ষায়, ছেলে রিদাদ তখন পরীক্ষার হলে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রিদাদের জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছিল আজিমপুরের পল্টন উচ্চ বিদ্যালয়। পরীক্ষা শেষে বাবাকে চিরবিদায় জানাতে আজিমপুর থেকে সোজা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে চলে আসে সে।
রিদাদের পরীক্ষার ঠিক আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে এর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে রোববার বেলা আড়াইটার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে দীপনকে সমাহিত করা হয়।
এই প্রকাশনী থেকে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের 'বিশ্বাসের ভাইরাস' বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, যিনি নিজেও গত ফেব্রুয়ারিতে একই কায়দায় হামলায় নিহত হন।
ঘটনার পর রাতে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের কোয়ার্টারে দীপনের বাসায় পরিচিতরা সমবেদনা জানাতে গেলেও এর মধ্যে নিজের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়েছে সদ্য বাবাহারা রিদাদকে। পাশের অন্য একটি কক্ষে পড়তে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাকে। কিন্তু পড়া হয়নি রিদাদের। বারবার এ রুম, ও রুম ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় রিদাদকে।
সকালে যখন পরিবারের সদস্যরা লাশ গ্রহণ করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছেন, ততক্ষণে পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিচ্ছিল সে। পরে জানাজার জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে।
জানাজায় উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ অন্যান্য শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
এ সময় দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক স্মৃতিচারণ করে বলেন, ''সবসময় সবার উপকার করতে চেয়েছে দীপন। কখনও কারো সঙ্গে তার কোনো শত্রুতা আছে বলে আমার জানা নাই। সে সবসময় সৎ পথে থাকতে চেয়েছে। কোনো মতে চলার জন্য সে প্রকাশনা সংস্থাটির সঙ্গে ছিল।''
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, ''আমি মামলা করতে চাই না, তবুও প্রক্টরের অনুরোধে মামলা করব। কিন্তু আমি জানি বিচার পাব না। এর আগে অনেক ঘটনাই তো বিচার চাওয়া হয়েছে, কোনো সুরাহা হয়নি। তাই বিচার চাওয়ার বিষয়ে কোনো আস্থা আমার নাই।''
তিনি বলেন, ''বন্ধুত্বের সূত্রে অভিজিত তার বই প্রকাশ করতে দীপনকে দিয়েছিল। আর সে কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।''
বিডি-প্রতিদিন/০১ নভেম্বর ২০১৫/এস আহমেদ