ঢাকার ১০টি থানা নিয়ে গঠিত উত্তরার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এখানে পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা পরিবারের মতোই সেবা পাচ্ছেন। কোনো ধরণের জটিলতা ছাড়াই মাত্র ৪০ মিনিটেই একজন পাসপোর্ট আবেদনকারী তার আবেদন জমা দিতে পারছেন।
সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টানা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন পাসপোর্ট কর্মকর্তারা। প্রতিদিন ৮০০ পাসপোর্ট জমা নেওয়া হচ্ছে। সুশৃঙ্খল পরিবেশে চলছে পাসপোর্ট অফিসের কাজ। কাজ ব্যতিত আলাদা কোনো ব্যক্তির আনাগোনা নেই। নেই কোনো দালালের দৌরাত্মা। এ যেন বদলে যাওয়া এক পাসপোর্ট অফিসের বাস্তব চিত্র। আর এসব কাজে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক গ্রাহকদের সেবায় ব্যস্ত রেখে দেখভাল করছেন উত্তরা পাসপোর্ট অফিসের প্রধান উপ-পরিচালক মো. আল আমিন মৃধা।
সরেজমিনে অফিস ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার উত্তরার সেক্টর-১৫, ব্লক-এইচ, রোড-৩/বি, প্লট-৫ এ অবস্থিত উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। ৬ষ্ঠ তলা ভবনের ৫ম তলা পর্যন্ত পাসপোর্ট গ্রাহকদের সেবার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ৬ষ্ঠ তলায় ক্যান্টিন ও করিডোরে ফুলের বাগান। ভবনের উপরে বিভিন্ন ফুল-ফলের গাছ দিয়ে ছাদ বাগান করা হয়েছে। এখানে ১০টি থানার জনগণকে পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে-বাড্ডা থানা, ভাটারা থানা, খিলক্ষেত থানা, উত্তরা পূর্ব থানা, উত্তরা পশ্চিম থানা, দক্ষিণখান থানা, উত্তরখান থানা, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানা, তুরাগ থানা ও আশুলিয়া থানা।
ভবনের নিচতলায় সহায়তা কেন্দ্র ও তথ্য কেন্দ্র রয়েছে। তারা আগত পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেন। ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত নিয়মাবলী তথ্য কেন্দ্রের পাশে ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে প্রদর্শণ করা হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক টোকেনের মাধ্যমে পাসপোর্ট বিতরণ করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে ডেলিভারী দিতে ৩টি কাউন্টার চালু রয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরে কক্ষ নম্বর ও কার্যক্রম প্রদর্শন রয়েছে। ভবনের প্রতিটি ফ্লোর পরিচ্ছন্ন দেখা গেছে। দ্রুততম সময়ে আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। পাসপোর্ট অফিসে প্রবেশ থেকে শুরু করে বাহির হওয়া পর্যন্ত একজন গ্রাহকের আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করতে গড়ে ৪০ মিনিট সময় লাগছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। আবেদন পত্রের সঙ্গে অপ্রয়োনীয় ডকুমেন্ট (যেমন- বাড়ি ভাড়ার চুক্তি, বিদ্যুৎ বিল, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য চাকরির প্রমাণ) ইত্যাদি চাওয়া হচ্ছে না। বীর মুক্তিযোদ্ধা, অসুস্থ, বয়স্ক লোকদের জন্য ভবনের নীচতলায় সকল কার্যক্রম সম্পাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অফিসের সময়ে যে কোন আবেদনকারী যাতে তার সমস্যা নিয়ে উপ-পরিচালক এর সঙ্গে কথা বলতে পারেন তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মহিলা ও পুরুষ আবেদনকারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারীদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কক্ষ রয়েছে।
প্রতিটি ফ্লোরে ফিল্টারসহ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরের বাথরুম ব্যবহার উপযোগী দেখা গেছে। ভবনের প্রতিটি রুমে ও সিড়িতে বিভিন্ন গাছ দিয়ে সাজিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসে একজন উপ-পরিচালক, একজন উপ-সহকারী পরিচালকসহ ২১ জন কর্মকর্তা-কমচারী রয়েছে। এর মধ্যে ৫ জন আউটসোসিং হিসেবে কাজ করে। তাদের সবার জন্যই সুন্দর কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। সবাই ঠিকমতো সেবা দিচ্ছে কিনা তা উপ-পরিচালক সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং করছেন। সেবায় ঘাটতি বা ব্যাতয় দেখলে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
ভবনের নিচে কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ্বে মো. আশ্রাফ উদ্দিন চৌধুরী ও নারগিছ আক্তার চৌধুরী দম্পতির সঙ্গে। তারা জানান, দক্ষিণখান এলাকা থেকে তারা ই-পাসপোর্ট করতে এসেছেন। কিন্তু একটি কাগজ সঙ্গে না আনার কারণে পাসপোর্ট জমা নিচ্ছিল না। পরে উপ-পরিচালক আল আমিন মৃধার সঙ্গে দেখা করি। তিনি কাগজপত্র দেখে দ্রুত পাসপোর্ট নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পরে এসে আরেকটি কাগজ দিয়ে যেতে বলে উপ-পরিচালক। আমরা তার আন্তরিকতায় ও ব্যবহারে অনেক খুশি।
উত্তরা পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মো. আল আমিন মৃধা বলেন, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে যোগদান করেন। তিনি এসেই অফিসে চিত্র গ্রাহক বান্ধব করেন। তথ্য পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় ৭ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন ছিল। তিনি এসেই নিষ্পন্ন করেন। তিনি আসার পর থেকেই একজন গ্রাহক মাত্র ৪০ মিনিটেই তার আবেদন জমা দিয়ে চলে যেতে পারছেন। যেকোনো সমস্যায় বিনা বাধায় তার রুমে প্রবেশ এবং কাজ সেরে গ্রাহকরা খুশি মনে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখানে প্রতিদিন ৮০০ ই-পাসপোর্ট জমা নেওয়া হচ্ছে। সমসংখ্যক ই-পাসপোর্ট ডেলিভারীও দেওয়া হচ্ছে। গ্রাহকরা যেন সহজেই হয়রানি ছাড়া এসব সেবা পেতে পারেন সেজন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। পাশাপাশি কোনো ব্যাতয় দেখলে নিদের্শনা বা পরামর্শ দিচ্ছি। আমি এখানে এসেছি জনগণের সেবা করতে। নম্রতা, ভদ্রতা ও বিনয়ী ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। একেকটি সেবার সঙ্গে আমার একেকটি খুশি জড়িত।
বগুড়ার কাহালু উপজেলায় জন্ম নেওয়া মো. আল আমিন মৃধা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১১ সালে তিনি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। তিনি বরিশাল, পাসপোর্ট সদর দফতর, যাত্রাবাড়ী, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পাসপোর্টের বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে উপ-পরিচালক আল আমিন মৃধা বলেন, ৮০০ ই-পাসপোর্ট জমা ও সমসংখ্যক মানুষ ই-পাসপোর্ট গ্রাহণ করতে আসেন। এছাড়া তথ্য সংগ্রহ, বিরুপ পুলিশ প্রতিবেদন, তথ্য সংশোধন, পরিবর্তন এসব কাজে দৈনিক গড়ে ৫০০ জন লোক আসছেন। স্বল্প সংখ্যক কর্মচারী দিয়ে এই বিপুল সংখ্যক সেবা প্রার্থীদের সেবা দিচ্ছি।
অনেকে আবেদনকারী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (যেমন-পুরাতন পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন ইত্যাদি) সঙ্গে আনেন না, ফলে তাদের আবেদন গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া সময়মত পুলিশ প্রতিবেদন না আসলে যথা সময়ে পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক সময় গ্রাহকরা লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা নিতে চান না, ফলে মাঝে মাঝে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত