দেশে ১৯৭৭, ২০১৩, ১৪, ১৫ সাল, ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা এবং চলতি বছর বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং পেট্রোলবোমা হামলায় দগ্ধ, আহতরা ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আর্তকণ্ঠে বলেছে, ‘আমাদের ওপর, আমাদের পরিবারের ওপর বিএনপি-জামায়াতের নৃশংস হামলাকারী এবং হামলার হুকুমদাতাদের দ্রুত বিচারের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই।’
রবিবার দুপুরে রাজধানীতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ’ এবং ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনদ্বয়ের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে অত্যাচারিত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এ দাবি জানায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এবং বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবীরা আমন্ত্রিত হিসেবে এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সমাবেশের নামের গত ২৮ অক্টোবর নৃশংস হামলায় নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলামের ছোট্ট মেয়ে তানহা ইসলাম এসেছিলেন তার মা রুমা আক্তারের সাথে। শিশু তানহা বলেন, ‘আমি টাকা জমাচ্ছি, প্রতিদিন একটু একটু করে। আল্লাহর কাছ থেকে বাবাকে কিনে আনবো।’
আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত আলমগীর হোসেনের সন্তান জাফর হোসেন প্রশ্ন রাখেন, ‘২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর আমার বাবার গাড়ির ওপর পেট্রোল বোমা মেরে বাবাকে হত্যা করা হয়। অথচ হত্যাকারীরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ বিএনপি মানবতার কথা বলে, আমাদের মানবতার বিচার কে করবে?’
অগ্নিদগ্ধ লিটন মিয়া বলেন, ‘চানখারপুল থেকে লেগুনায় ওঠার পর ককটেলের বিস্ফোরণে ভেতরে থাকা ১৩ জন আহত হই। গাড়িতে আগুন ধরে যায়। আমরা তো রাজনীতি করি না, আমাদের কী অপরাধ ছিল? আমাদের দোষ, আমরা খেটে খাই। এখন পর্যন্ত এ ঘটনার বিচার হয়নি। তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।’
পেট্রোল বোমায় স্বামী-সন্তান হারানো মাশরুহা বেগম বলেন, ‘২০১৫ সালে স্বামী ও কোলের শিশু মাইশা নাহিয়ানকে নিয়ে বাসে যাচ্ছিলাম। পেট্রোল বোমায় চলন্ত বাসে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। আমার স্বামী ধাক্কা দিয়ে আমাকে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। কিন্তু চোখের সামনে স্বামী ও সন্তানকে হারাই। আমার বেঁচে থাকা দুঃস্বপ্নের মত, এটা কে কি বেঁচে থাকা বলে? আমি এ বিচার চাই।’
নিহত পুলিশ সদস্য বাবলু মিয়ার স্ত্রী বলেন, ‘আমি স্বামী হারিয়েছি, আমার সন্তান বাবা হারিয়েছে। আর কেউ যেন স্বামী হারা-সন্তান হারা না হয়। এর কি বিচার হবে?’ ২০১৪ সালে ককটেলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত চোখ নিয়ে বেঁচে থাকা শিক্ষার্থী অন্তু বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা শিশুরা কি অপরাধ করেছিলাম। আমরা কেন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার। পেট্রোলবোমা-ককটেল মেরে এটা কী ধরনের রাজনীতি। আমরা একটা সুষ্ঠু সুন্দর দেশ চাই, যেখানে পেট্রোলবোমা থাকবে না।’
এডভোকেট তারানা হালিম, ডা. নুজহাত চৌধুরী এবং নাহিদ ইজহার খানের সঞ্চালনায় স্বজন হারানো এবং শরীরে পোড়া ক্ষত নিয়ে নিদারুণ কষ্টে বেঁচে থাকা আরও কয়েকজনের এমন দুঃসহ যন্ত্রণার কথা আর আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে নাট্যশালা মিলনায়তন। শ্রোতা-দর্শকদের নিরবতার মধ্যে দুঃসহ সেইসব দিন আর কষ্টের কথা তুলে ধরেন তারা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেককে অশ্রুসজল হতে দেখা যায়।
অগ্নিসন্ত্রাসে নিহত জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী আফরোজা বেগম, নিহত আজাদ শেখের ভাই শেখ সাজ্জাদ, নিহত জাহিদুল ইসলামের বাবা আবুল হোসেন, নিহত জাহিদ হাসানের মা, আহত শাহাদৎ হোসেন বাবুল, এড. খোদেজা নাসরিন, গীতা সেন, নিহত মানিক সাহার ভাই প্রদীপ সাহা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত নাসিমা ফেরদৌস, নাজিম উদ্দীন, কাজী শাহানারা ইয়াসমিন, রাশিদা আক্তার, মেহেরুন নেছা মেরি প্রমুখের বক্তৃতায় আর্ত সম্মেলনের শুরুতে একটি নাটিকার মাধ্যমে অগ্নিদগ্ধদের যন্ত্রণা চিত্র তুলে ধরে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। এরপর বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় নিহত ও আহত অগ্নিদগ্ধদের ওপর এবং যানবাহনের অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করে আয়োজকরা।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত