ভয়ংকর মাদক ইয়াবা এখন দেশের আনাচে কানাচে ব্যাপক আকারে বিস্তৃতি লাভ করেছে। আসন্ন থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারসহ সারাদেশে মরণনেশা ইয়াবা মজুদ ও সরবরাহ বাড়াতে আগেভাগেই তত্পরতা বাড়িয়ে দিয়েছে সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটের আগে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অসাধু ইয়াবা সিন্ডিকেট সদস্যরা শত কোটি টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের প্রস্তুতি নিয়েছে। এজন্য তারা সড়কপথ ছাড়াও প্রয়োজনে টেকনাফ স্থলবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর ও কক্সবাজার বিমান বন্দরের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন নৌপথকে নিরাপদ চ্যানেল হিসেবে বেছে নিয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃংখলা বাহিনীর অসাধু সদস্যদের ম্যানেজের মাধ্যমে চক্রের সদস্যরা ইতোমধ্যে শত কোটি টাকা মূল্যের এসব ট্যাবলেটের বস্তা বস্তা চালান নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, অসাধু সাংবাদিক ও একশ্রেণীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দফারফা সম্পন্ন করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে দিন দিন ইয়াবার চাহিদার পরিমাণ যেমন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে তেমনি বাড়ছে এর সেবনের পরিমাণও। ইয়াবা আসার অন্যতম প্রধান র’ট মিয়ানমার থেকে টেকনাফ, উখিয়া হয়ে কক্সবাজার। তাছাড়া সীমান্তের কুতুপালং ক্যাম্পের বস্তি এলাকা ও বালুখালীর বেশ কয়েকটি গুদামে ইয়াবার মজুদ বাড়াচ্ছে ইয়াবা সিন্ডিকেট। এসব ইয়াবা সিন্ডিকেটর মধ্যে উখিয়া উপজেলার বালুখালী, ঘিলাতলী, হাজীরপাড়া ও দুছড়ি এলাকার কয়েকটি সিন্ডিকেট বর্তমানে দিনে-রাতে মিয়ানমার থেকে নির্দিষ্ট কয়েকটি গুদামে ইয়াবা মজুদ করে যাচ্ছে। মজুদকৃত এসব ইয়াবা সড়কপথে সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে পাচারে ব্যস্ত রয়েছে অন্য কযেকটি সিন্ডিকেট। উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পভিত্তিক ২ শতাধিক রোহিঙ্গা মহিলা ছাড়াও কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তের অর্ধশতাধিক পয়েন্টে ৬ শতাধিক পাচারকারী নারী-পুরুষ মরণ নেশা ইয়াবা পাচার কাজে জড়িত রয়েছে। কক্সবাজারের সীমান্ত অঞ্চলসহ সর্বত্র হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে যৌন উত্তেজক ইয়াবা ট্যাবলেটসহ রকমারি মাদকদ্রব্য। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মাঝে মধ্যে ইয়াবা ও মাদকের চালান ধরা পড়লে ও গডফাদারেরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের আন্তর্জাতিক চোরাচালান সিন্ডিকেট এখন অস্ত্র ব্যবসার পরিবর্তে মাদক ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের অধিকাংশের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে। মূলত তিন শতাধিক সদস্যের একটি দল সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইয়াবা ও মানবপাচার এক সূত্রে গাথা।
মানবপাচারকারীদের বেশিরভাগ ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এদের অনেকেই ইতিমধ্যে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে। সীমান্তে দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদ্যসরা একের পর এক অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের চালান উদ্ধার করতে পারলেও শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় কোনো মতেই ইয়াবাসহ মাদক পাচার থামছে না। এ কারণে সীমান্তে দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ইয়াবা প্রতিরোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের শতাধিক নেতাকর্মী এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করলেও তাদের গায়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আচঁড় লাগছে না।
টেকনাফ উপজেলার শাহপরীরদ্বীপ, কালার পাড়া, নয়াপাড়া, সাবরাং, জালিয়া পাড়া, নাইটং পাড়া, জাদিমুরা, হ্নীলা, মৌলভী বাজার, উনচিপ্রাঙ্ক, হোয়াইক্যং, উলুবনিয়া, তুলাতলী, উখিয়া উপজেলার আঞ্জুমান পাড়া, পালংখালী, রহমতের বিল, ধামনখালী, বালুখালী, কাট পাহাড়সহ ৩৫টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারকারী ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজারজাত হয়ে আসছে। শুধু বাংলাদেশের মাদকের বাজারকে লক্ষ্য করে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ৭টি কারখানায় কোটি কোটি পিস ইয়াবা উত্পাদন হয়ে থাকে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানা গেছে।
এ ব্যাপারে উখিয়া-টেকনাফের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল মালেক মিযার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটছে, তবুও থার্টি ফাস্ট নাইটকে কেন্দ্র করে পুলিশ আগের চেয়ে বেশি তৎপর রয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত রবিবার উখিয়ার মাদক সম্রাট সিরাজ ২ লাখ পিস ইয়াবাসহ চট্টগ্রামে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হন। এছাড়াও গত সোমবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অফিস সহকারী উখিয়ার মাহামুদুল হক ২ হাজার পিস ইয়াবাসহ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অফিস কক্ষে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে আটক হয়।
বিডি-প্রতিদিন/২৩ ডিসেম্বর ২০১৫/শরীফ