দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (জাদুঘর) চত্তরে আয়োজিত পক্ষকাল ব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব ও বৈশাখী মেলায়। শনিবার দুপুরের পর থেকে অনেকেই মেলায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসতে দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী এ উৎসবে আসেন। ছুটির দিন উপলক্ষে মেলায় আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোমবার সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইলিয়া সুমনা এ মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
ফাউন্ডেশন সুত্রে জানা যায়, এবারে কুমারপাড়ার কারিগররা এনেছে মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কলসি, বাসনকোসন, মালসা, সরা, ঘটিবাটি ও শিশুদের মনকাড়া সব খেলনাসামগ্রী। যার মধ্যে আছে রঙেচংয়ে সাজানো হাতি, ঘোড়া, নৌকা, পাখি, পুতুল, গরু, খরগোশ ও ব্যাঙ প্রভৃতি। কাঠশিল্পী (ছুতার) সম্প্রদায়ের লোকেরা আনে লাঙল, জোয়াল, মই, খাট-পালং, আলমারি, চেয়ার, টেবিল, সিন্দুক, পিঁড়ি, বেলনা, খাদি, বাতিদানি, ডালঘুটনি, কাঁকই, লাটাই, খড়ম ও আলনাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য। বাঁশ ও বেতের কাজ যারা করেন তারা ধামা, কুলা, ডালা, খালুই, টুকরি, পলো, সরপোশ, পাখির খাঁচা, ভেলকি, দমা, চারো, চাটাই, ঝুড়ি, মাদুরপণ্য নিয়ে এসেছেন মেলায়। তা ছাড়া এখানে পণ্য নিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। একই সঙ্গে পসরা সাজান মণ্ডা, মিঠাই, জিলাপি, বাতাসা, তক্তি, নাড়ু-চিড়ে, মুড়ি-মুড়কি, বরফি, কদমা, সন্দেশ, পানতোয়া, রসগোল্লা, চমচম, রসমালাই, দই, বন্দেল, রসমুণ্ডুসহ মিষ্টান্নসামগ্রী দিয়ে। এ মেলার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে অনেক সহজলভ্য পণ্যের সঙ্গে দুষ্প্রাপ্য পণ্যের আমদানি।
শুক্রবার বিকেলে এ মেলায় কথা হয় নকশিকাঁথা শিল্পী হোসনে আরার সঙ্গে। তিনি বলেন, শিল্পীদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রি, বিপণন ও জাতীয় পর্যায়ে সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরার জন্য ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে আমি এ মেলায় পণ্য নিয়ে আসি। তবে অন্য বারের চেয়ে এবার আয়োজন ছিল ভিন্ন। ক্রেতাও এসেছে অনেক। এখানে আমাদের তৈরি নকশিকাঁথা পেয়ে অনেকেই খুশি হয়েছেন।
শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় এ মেলায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন। কুমিল্লা থেকে আগত আদিবা আক্তার বলেন, মেলায় হাতের তৈরি কাঠের, তাঁতের বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করেছেন তিনি। বৈশাখী মেলায় এসে তারা মুগ্ধ হয়েছেন বিভিন্ন কারুপণ্য দেখে ও ক্রয় করে।
তার মতো ঢাকার কেরানিগঞ্জ থেকে এ মেলায় এসেছেন আফরিজ সুলতানা ও তার পরিবার। পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে তিনি বলেন, নানা ব্যস্ততার কারণে সপ্তাহের অন্যান্য দিন অবসর থাকা হয় না। আজ ছুটির দিন হওয়ায় পরিবারকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছি। শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, এই মেলায় এসে গ্রামবাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্যের সঙ্গে ছেলেমেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আমার এখানে আসা
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, এবারের আয়োজনটি একটু ভিন্ন। আমাদের এই ফাউন্ডেশনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের পাশাপাশি পক্ষকাল ব্যাপী ভিন্ন আঙ্গিকে এবার বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই এবার একটি ব্যাতিক্রমী আয়োজন করা হয়েছে৷ দেশের আনাচে-কানাচে থাকা লোকজ ও কারুশিল্পের শিল্পীদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রি, বিপণনসহ সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরার জন্য এ বৈশাখী মেলার মূল উদ্দেশ্য।
বিডি প্রতিদিন/এএম