দীর্ঘদিন বড় পর্দায় অনুপস্থিতি, অভিমানে নাকি অন্য কিছু-
-না, অভিমান নয়, একযুগেরও বেশি সময় টানা কাজ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। তবে আরেকটি কারণও আছে। একসময় দেখলাম ছবি নির্মাণ হচ্ছে সত্যি, কিন্তু তাতে সত্যিকারের গল্প , ফটোগ্রাফি, নির্দেশনা বলতে কিছু নেই। ফলে এসব ছবি দর্শকমন আলোড়িত করতে পারছে না। তাই ভাবলাম অর্থের জন্য মানহীন কাজ করার কোনো মানে হয় না। যে কাজ দর্শক হৃদয় ছুঁতে পারে না সে কাজ না করাই ভালো। তাই দূরে সরে গেলাম।
কখন ফিরছেন?
ফিরতেতো চাই। এর জন্য চাই বিশ্বমানের নির্মাণ। কারণ কোনো কিছুই এখন আর নিজ দেশে সীমাবদ্ধ থাকে না। সব কাজেই বিশ্ব প্রতিযোগিতা চলছে। পিছিয়ে রয়েছি শুধু আমরা। আমাদের এখানে এখন যে সব ছবি নির্মাণ হয় তা টেলিফিল্মের চেয়েও নিম্নমানের। নাটকের বেটার মেকিংও বলা যেতে পারে। তাই এসব কাজ করে অর্জিত সুনাম নষ্ট করতে চাই না। এমন ছবি চাই যার প্রতিটি ফ্রেম কথা বলবে, বিশাল ক্যানভাস হবে। এককথায় বিশ্ব মানের চলচ্চিত্র। সেই অপেক্ষায় আছি। তা ছাড়া দীর্ঘ বিরতিতে গিয়ে শরীরে শ্যাওলা জমে গেছে। এগুলো সারাতেও সময় লাগবে। সবমিলিয়ে অনুকূল সময় দেখেই ফিরব।
চলচ্চিত্রের বর্তমান অব্যবস্থার জন্য কাকে দায়ী করবেন?
পাইরেসি, বুকিং এজন্টদের ঝামেলা, অশ্লীলতা, ভালো নির্মাতাদের চলে যাওয়া, প্রকৃত গল্পকার এবং চিত্রনাট্যকারের অভাব ইত্যাদি অবক্ষয় চলচ্চিত্রকে ডুবিয়েছে। বর্তমানে পেশাদার নির্মাতার বড়ই অভাব। এখন বিদেশে শুটিং হচ্ছে, প্রযুক্তিগত উন্নয়নও হয়েছে। তারপরেও দর্শক মন জয় করা যায় এমন ছবি পাওয়া যাচ্ছে না। গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে আমি এমন কোনো মানসম্মত ছবি পাইনি। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে বাধ্য হয়ে বলতে হয়- সাত মণ তেলও পুড়ছেনা, রাধাও নাচছে না।
নির্মাণে ফিরবেন ?
'হৃদয়ের কথা' চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছিলাম। তখন চরম অশ্লীলতার মধ্যে এটি ছিল চলচ্চিত্রের সুদিন প্রত্যাবর্তনেরর্ টানিং পয়েন্ট। এ ছবির জয়ের ধারায় প্রচুর ভালো ছবি নির্মাণ হতে থাকে। এখন তেমন গল্পকার আর চিত্রনাট্যকার পাচ্ছি না বলে সাহস করে এগুতে পারছি না। কারণ মানসম্মত পাণ্ডুলিপি হচ্ছে সফল চলচ্চিত্রের মূল ভিত্তি। এখন যে খুশি গান ,গল্প লিখে ফেলছে, ছবি ও সংগীত পরিচালনা করছে, গাইছে, তাতে তাল, লয়, সুর থাকুক বা নাই থাকুক, সফটওয়্যারের ওপর নির্ভর করে কিছু একটা করতে পারলেই হলো। এতে দর্শক চরম বিরক্ত এবং হতাশ হচ্ছে। তা ছাড়া দর্শক এখন এমন চলচ্চিত্র দেখতে চায় যা তারা আগে কখনো দেখেনি। এমন গল্প নিয়েই নির্মাণে ফিরতে চাই।
বড় ও ছোট পর্দায় আপনার আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার মূল মন্ত্র কি?
এতে ব্যক্তি রিয়াজের কোনো কৃতিত্ব নেই। শিল্পী হিসেবে যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই তখন মনে করি দেশের ১৬ কোটি মানুষের সামনে দাঁড়িয়েছি। আমার কাজের প্রতিচ্ছবি তাদের মনের আয়নায় প্রতিফলিত হতে হবে। আসলে কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে মানুষের ভালোবাসা বা জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় না। স্বার্থ ত্যাগ করতে না পারলে ভালোবাসার ভিত মজবুত হয় না। এদিকটায় বরাবরই লক্ষ রেখেছি বলেই দর্শক তাদের মনের মণিকোঠায় আমাকে ঠাঁই দিয়েছে।
ঈদে ছোটপর্দায় আসছেন?
হ্যাঁ, বেশ কজন তরুণ নির্মাতার নির্দেশনায় ঈদের বেশ কটি নাটকে কাজ করলাম। তাদের কাজে মুগ্ধ হয়েছি। কারণ কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে তারা আসলেই প্রমেজিং ডিরেক্টর। দর্শক নিশ্চয়ই তাদের মান সম্মত কাজে মুগ্ধ হবে।
এবার বিশ্বকাপ ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনার ঘরে যাবে?
বরাবরই আমি ব্রাজিলের সাপোর্টার। তবে এবার এ দলের খেলা দেখে হতাশ হয়েছি। মনে হচ্ছে নেইমার ছাড়া এ দলে যোগ্য কোনো খেলোয়াড় নেই। আর্জিন্টিনারও একই অবস্থা। মেসিকে মাইনাস করলে ওই দলে আর কিছুই থাকে না। তাই এবার জার্মানিকেই প্রমেজিং টিম মনে হচ্ছে। বিশ্বকাপ তাদের ঘরেই উঠতে পারে।
আলাউদ্দীন মাজিদ