মিডিয়াতে পিতা-পুত্রের শক্ত যুগলবন্দী সংখ্যা কম আর এর পেছনে কারণও আছে অনেক। আগে তারকা পিতারা ইচ্ছা করেই নিজ সন্তানদের মিডিয়ায় আনতে নারাজ ছিলেন। তারা বলতেন, এখানে ভালো কিছু করার পরিবেশ নেই, এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু এখন তারকা বাবা-মায়েদের মুখের কথা পাল্টেছে। এখন তারা সন্তানদের প্রতি অনেক খেয়ালি, নিজেদের পথটা নতুন করে সন্তানদের মধ্য দিয়ে মাড়িয়ে নিতে সদা উদ্যোগী। তাই তো মিডিয়ায় ক্রমশ বাড়ছে বংশপরম্পরার ঘটনা। বিশেষ করে সংগীতাঙ্গনের একাধিক তারকা পিতার সন্তানরা এরই মধ্যে সবকিছুকে ছাপিয়ে হাল ধরেছেন বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের। কণ্ঠ-সুর-সংগীত-কথা সব কিছুতেই ক্রমশ শীর্ষস্থান দখল করছেন উত্তরসূরিরা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই। এ তারকা পিতাদের তালিকায় চলে আসেন আলম খান, বশীর আহমেদ, প্রয়াত মাহমুদুন্নবী, ফেরদৌস ওয়াহিদ, কাজী হাবলু, রিপন খান, আবদুল জব্বার, সৈয়দ আবদুল হাদী, খালিদ হাসান মিলুসহ আরও অনেকে। সংগীতাঙ্গনের এ স্বনামধন্য পিতাদের অতি যোগ্য উত্তরসূরির তালিকায় চলে আসেন যথাক্রমে সুরকার সংগীত পরিচালক আরমান খান, কণ্ঠশিল্পী আলী বশীর-হুমায়রা বশীর, ফাহমিদা নবী-সামিনা চৌধুরী, শিল্পী-সুরকার-সংগীত পরিচালক হাবিবুল ওয়াহিদ হাবিব, কাজী আনান, হৃদয় খান, শিল্পী মিথুন জব্বার, প্রতীক হাসান এবং কণ্ঠশিল্পী তনিমা হাদী।
এর মধ্যে ফেরদৌস ওয়াহিদের পথ ধরে পুত্র হাবিব ওয়াহিদ নিজ যোগ্যতায় দখল করে নিয়েছেন গানের বাজার। অনেকেই মনে করেন, এ যোগ্যতা হাবিবের একার নয়, তার আজকের সফলতার অর্ধেকজুড়ে আছে পিতার সঠিক ছায়া এবং পথ-নির্দেশনা। এ নিয়ে হাবিব বলেন, 'আব্বুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক পুরো বন্ধুর মতো। আমার প্রেম-বিয়ের খবরটাও বাবার সঙ্গে সরাসরি শেয়ার করি। আমাদের সম্পর্ক এবং বিশ্বাসের মাত্রাটা এ পর্যায়ে আছে বলেই হয়তো এই সফলতা। আমি কখনো নিজেকে পূর্ণ মনে করি না, সঙ্গে যদি আব্বু না থাকে।' অন্যদিকে ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, হাবিবুলের (হাবিব) মধ্য দিয়ে আমি নতুন করে বাঁচব এমন স্বপ্ন বেশ পুরনো। বলতে পারেন এটি সনাতন স্বপ্ন। কারণ, যে কোনো পিতাই চাইবে তিনি তার সন্তানের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকতে। আমিও এমন একটি স্বপ্ন বুকে চেপে ওকে ইংল্যান্ড পাঠাই মিউজিক নিয়ে পড়াশোনার জন্য। ব্যস তার পরেরটুকু তো দেখলেনই। এখনো দেখছেন আমাদের চলন-বলনে। সত্যি বলতে আমি ওকে বিশ্বাস করি, আর ও আমাকে করে। তা না হলে কবেই পিতা-পুত্রের সংসার দা-কুমড়ায় পরিণত হতো! মূলত এ জুটির সফলতা আর ভালোবাসার রসায়ন ধরেই চলমান সংগীতাঙ্গনের তারকা পিতারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন নিজেদের সন্তানদের নিয়ে।
খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে জিঙ্গেল কিং-খ্যাত সুরকার রিপন খান চমক দেখিয়েছেন তার পুত্র হৃদয় খানকে দিয়ে। হৃদয় খানের চমক কাটতে না কাটতে রিপন খান আরও একধাপ বেশি চমকে দিয়ে গানের বাজারে নিয়ে এসেছেন তার স্কুলপড়ুয়া কনিষ্ঠ পুত্র প্রত্যয় খানকে। যে প্রত্যয় খান বয়সে কিশোর হলেও এরই মধ্যে কম্পোজার হিসেবে বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছে 'এফএনএফ' নামের একটি মিশ্র অ্যালবামের আয়োজন করে। আরেক স্বনামধন্য তারকা মিউজিশিয়ান কাজী হাবলুও নিজের পুত্র কাজী আনানকে নিয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। পিতার পরামর্শ আর উৎসাহ নিয়ে এরই মধ্যে কাজী আনান সংগীত পরিচালক হিসেবে ভালো পরিচিতি পেয়েছেন। তবে এটুকু সত্যি, কাজী হাবলু এবং কাজী আনানের মধ্যকার সম্পর্ক যে কোনো সমবয়সী বন্ধুত্বকেও হার মানাবে। এদিকে স্বনামধন্য সংগীত পরিচালক আলম খানের পুত্র আরমান খানের অবস্থান অন্য যে কোনো পিতার বিচারে বেশ আলাদা। এদিকে সংগীত বাজারে বছর দুই আগে নিজ পুত্র মিথুন জব্বারকে নিয়ে হাজির হয়েছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্বনামধন্য সংগীত তারকা আবদুল জব্বার। এরই মধ্যে পিতার উৎসাহ নিয়ে একটি অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন মিথুন। পুত্র প্রসঙ্গে আবদুল জব্বার বলেন, আমি আমার সন্তানকে মিউজিকের ওপর পড়িয়েছি। আমার ইচ্ছা ও আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। এ প্রজন্মের আরেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী প্রতীক হাসান। বাবা প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী খালিদ হাসান মিলুর হাত ধরেই সংগীত জগতে তার প্রবেশ। লিটন অধিকারী রিন্টুর কথা এবং আলী আকবর রুপুর সুরে 'জীবনের এই আনন্দময় দিন' গানটি প্রতীক হাসান-এর জীবনে প্রথম রেকর্ডকৃত গান, যা ইত্যাদিতে প্রচারিত হয়। গানটি প্রচারের পর ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। এ অনুষ্ঠান প্রচারের ছয়-সাত মাসের মাথায় খালিদ হাসান মিলু ইন্তেকাল করেন। বাবা হরানোর এক বুক কষ্ট নিয়ে গানের জগতে পথচলা
শুরু করেন প্রতীক। এই মধ্যে শ্রোতাদের ভালোবাসার তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন এই তরুণ শিল্পী।
এদিকে গেল ঈদে বামবার একটি শোর মধ্য দিয়ে মঞ্চে অভিষেক ঘটে আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে তাজোর। আইয়ুব বাচ্চু, স্বপন, মাসুদ ও রোমেলকে ছাপিয়ে সেদিন মধ্যমণি হয়ে উঠলেন এক তরুণ গিটার বাদক। এ প্রসঙ্গে আইয়ুব বাচ্চু বলেন, 'এ দেশে সংগীতের পথটা অনেক নির্মম। অনেক যন্ত্রণা বুকে চেপে বহু বছর ধরে গান করে যাচ্ছি। তবে আমি চাই না, তাজো গান-বাজনাকে পেশা হিসেবে নিক। 'আমার ছেলে আজ আমার পাশে দাঁড়িয়ে বাজিয়ে যাচ্ছে অনর্গল। একজন পিতা হিসেবে এর চেয়ে সুখের ঘটনা কী হতে পারে! আজ সত্যিই আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী বাবা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি আপনাদের সামনে। তবুও আমি চাই না, পেশা হিসেবে সংগীত বেছে নিক তাজোর। যতদিন এই শিল্প নিয়মের মধ্যে আসবে না ততদিন শৌখিনভাবেই গান করাই ভালো ওর জন্য।' আর কুমার বিশ্বজিতের পুত্র নিবিড় দুর্দান্ত পিয়ানো বাজায়। সন্তানের এমন প্রতিভায় দুই তারকা পিতাও বেশ উৎসাহী। ফলে আগামীর সংগীতাঙ্গনে পিতা-পুত্রের এমন বেশ কিছু চমক অপেক্ষা করছে তারকা পিতাদের ঘরে ঘরে।