আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন আপনি, এবারই প্রথম আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাচ্ছিলাম?
আসলে হয়তো ভালো কিছু গান করেছিলাম বিধায়ই এখন পর্যন্ত আমার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। শ্রোতা দর্শক, দেশ আমাকে ভালোবেসে এই সম্মান দিয়েছে। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। সেইসঙ্গে শুভেচ্ছা সাংস্কৃতিক ফোরাম এবং এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান অপূর্বর প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ তার উদ্যোগেই আজীবন সম্মাননা পেয়েছি। আমি সংগঠনটির প্রতি কৃতজ্ঞ।
শিশুশিল্পী হিসেবে আপনি ছোটবেলাতেই পুরস্কৃত হয়েছিলেন?
ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় থেকে রেডিওতে ছোটদের অনুষ্ঠানে বড়দের মতো ১০ মিনিটের নির্ধারিত সময় বেহালায় উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশন করতাম। 'অল পাকিস্তান চিলড্রেনস কম্পিটিশনে অংশ নিয়ে ১৯৬৪ সালে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী (বেহালা বাদক) হিসেবে পুরস্কার পাই। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকেই চলচ্চিত্রের গানে বেহালাবাদক হিসেবে কাজ শুরু করি।
প্লে-ব্যাকে কীভাবে আপনার যাত্রা শুরু?
যতদূর মনে পড়ে, 'বেহুলা' সিনেমায় প্রথম বাজানো শুরু করি। তখন তো একজন সুরকার কাজ করতেন না। একাধিক সুরকার একসঙ্গে কাজ করতেন। যেমন খন্দকার নুরুল আলম, সত্য সাহা, খান আতাউর রহমান, আলতাফ মাহমুদ সাহেবের সঙ্গে বাজাতাম। ১৯৭০ সালে শহীদ আলতাফ মাহমুদের প্রধান সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করি চলচ্চিত্রে। পরবর্তী সময়ে ধীর আলী, মনসুর আলী এবং আনোয়ার পারভেজের সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি।
এককভাবে কবে থেকে কাজ শুরু করেন?
১৯৭৪ সালে একটি সিনেমার জন্য চুক্তিবদ্ধ হই 'সন্ধিক্ষণ' নামে। এটি ব্যবসা সফলতা পায়নি। এরপর মাঝখানে কয়েক বছর গ্যাপ যায়। ১৯৭৭ সালে একসঙ্গে বড় দুটি ছবির কাজ পাই। একটা হলো আমজাদ হোসেনের 'গোলাপী এখন ট্রেনে' এবং দারাশিকো সাহেবের 'ফকির মজনু শাহ'। এ দুটি চলচ্চিত্র আমার সংগীত পরিচালক, সুরকার হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। দুটি ছবির সবগুলো গানই শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। গোলাপী এখন ট্রেনের 'হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ', 'আছেন আমার মোক্তার' এবং 'ফকির মজনু শাহ' ছবির 'চোখের নজর এমনি কইর্যা', 'প্রেমের আগুনে', 'সবাই বলে বয়স বাড়ে আমি বলি কমেরে' গানগুলো জনপ্রিয়তা পায়। একসঙ্গে দুটি ছবির গানের জনপ্রিয়তা পাওয়ার ফলে কিছুটা লাইম লাইটে চলে আসি এবং চলচ্চিত্রের সুরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাই।'
একই পরিচালকের তিনটি চলচ্চিত্রে কাজের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান আপনি?
দর্শকপ্রিয় পরিচালক আমজাদ হোসেন পরিচালিত 'গোলাপী এখন ট্রেনে', 'সুন্দরী' ও 'কসাই' চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করে পরপর তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর আরও পাঁচবার তিনি এই সম্মাননা লাভ করেন।
আপনাদের সময় আর এ সময়ের সুরকার, সংগীত পরিচালকদের মধ্যে পার্থক্যটা কী?
এখন চটজলদি ব্যাপারটা বেশি দেখা যাচ্ছে। বরাবরই একটা কথা বলি, যে যে কাজটা করবে সেটা শিখে না এলে কিছুই করতে পারবে না। বিষয়টা জেনে করলে ভালো কিছু করা সম্ভব। এমন অনেকেই এসেছেন হঠাৎ তাদের দু-একটা গান জনপ্রিয় হয়েছে কিন্তু পরে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটা শুধু না শেখার কারণে। তরুণদের মধ্যে যারা কিছু কিছু জানে তারা ভালো করছে। আরেকটু মনোযোগ দিয়ে করে, আরেকটু শিখতে চায়, জানতে চায়, তাহলে সে ভালো করবে।
* আলী আফতাব