কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। জন্ম ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭৯। গ্রামের বাড়ি যশোর। বয়স তখন কিশোর ঘরে। ১৪ বছর বয়সী নূপুরের রুপালি পর্দায় আগমন এক 'চাঁদনী রাতে'। চাঁদের আলোয় স্নাত হয়ে 'নূপুর' হলেন 'শাবনূর'। সময়টা ১৯৯৩। পায়ের নিচের মাটিতে তখন জোর নেই তেমন। মানে পথ চলার শুরুতে কাঁপা কাঁপা পায়ে হাঁটা। অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়নি বেশি দিন। ১৯৯৫ সালে খুঁজে পেলেন 'স্বপ্নের ঠিকানা'। সালমান শাহের বিপরীতে অভিনয় করা ছবি নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দিল শাবনূরকে। শাবনূরের অভিনয় জীবনের সাত-সতের নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
একটু পেছনে ফিরে যাই। পথচলার শুরুটা মনে পড়ে?
নায়িকা হব এমন চিন্তার বয়স তখন আমার হয়নি। বাবার সঙ্গে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম দাদুর [আমি তাকে দাদু বলে ডাকি] পরিচয় ছিল। সেই সুবাদে পরস্পরের বাসায় আসা-যাওয়াও ছিল। একদিন দাদু বাবাকে বললেন, নূপুরকে দাও। ও আমার ছবির নায়িকা হবে। প্রথমে আপত্তি থাকলেও পরে বাবা আর না করেননি। ১৯৯৩ সাল। ছবির নাম 'চাঁদনী রাতে'। আমার নায়ক ছিলেন সাবি্বর। ব্যস, রুপালি পথ ধরে হাঁটা শুরু।
নূপুর থেকে শাবনূর হলেন কীভাবে?
এহতেশাম দাদুই নামটা দিলেন। তিনি বললেন, নূপুর আজ থেকে তোমার নাম দিলাম শাবনূর। আমি যাদের হিরোইন করে এনেছি সবার নতুন নাম রেখেছি। আর নামের শুরুটা দিয়েছি 'শ' আদ্যক্ষর দিয়ে। যেমন- শবনম, শাবানা. শাবনাজ। তোমার নাম দিলাম শাবনূর। নামটা আমারও বেশ মনে ধরল। লাকী নাম অবশ্যই। শাবনূর হয়ে আমার ভাগ্যটাও বদলে গেল।
শাবনূর নামের অর্থ?
হ্যাঁ, দাদু অর্থটাও বলে দিয়েছিলেন। 'শাব' অর্থ রাত আর 'নূর' অর্থ আলো। মানে রাতের আলো। কিন্তু সবাই বলে তুমি শুধু রাতে নয়, সারাক্ষণ আলো ছড়িয়ে যাচ্ছ। হা... হা...হা...
'চাঁদনী রাতে' দিয়েই জ্যোৎস্না ছড়ানো শুরু?
না, ছবিটি দর্শক খুব একটা লুফে নেয়নি। গন্তব্যে পৌঁছতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ১৯৯৫ সালে সালমান শাহ আর আমাকে জুটি করে এম এ খালেক নির্মাণ করলেন 'স্বপ্নের ঠিকানা'। ছবিটি রীতিমতো ঢালিউড কাঁপাল। ব্যস, আমিও পৌঁছে গেলাম স্বপ্নের ঠিকানায়। এর আগে অবশ্য সালমানের সঙ্গে আরও ছয়টি ছবিতে কাজ করি। তবে এটিই ছিল আমাদের জুটির বড় মাপের হিট ছবি। বলতে পারেন ছবিটি আমার অভিনয় ভিতকে মজবুত করে দিয়েছে।
১৯৯৩ থেকে ২০১৩। ২০ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে মুক্তি পায় শাবনূর অভিনীত ৯৪টি ছবি। একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানা স্বীকৃতিতে ভরে নিলেন প্রাপ্তির ঝুলি। এরপর কিছুটা অনিয়মিত হয়ে পড়লেন অভিনয়ে। গোপন প্রণয়সহ নানা মুখরোচক খবর ফিরল মুখে মুখে। এই খবরের খুঁটি শক্ত হলো যখন তিনি বছরের বেশির ভাগ সময়টা অস্ট্রেলিয়ায় কাটাতে শুরু করলেন। তখন এর উত্তর দিলেন তিনি এভাবে- ২০টি বছর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমিও তো রক্ত-মাংসে গড়া একজন মানুষ। আমারও তো বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। তাই অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ছোট বোন ঝুমুরের সঙ্গে বেড়িয়ে ক্লান্তি ঝাড়ছি। গোপন প্রণয়-ট্রনয় সবই গুজব। যখন বিয়ে করব সবাইকে জানিয়েই করব। কিন্তু সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করা হয়নি শাবনূরের। ২০১৩ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে মিডিয়াকে জানালেন ২০১২ সালে সহশিল্পী অনিককে বিয়ে করেছেন তিনি। এখন মা হতে যাচ্ছেন। শাবনূরের এমন ঘোষণায় সবার চোখ কপালে উঠল। সবাই বলল একি শুনি!। জবাবটা যেন প্রস্তুত করাই ছিল শাবনূরের। সাবলীলভাবে তিনি বললেন- আরে বিয়ে আর বাচ্চার খবর মানুষ তো ঘটা করে ঢাকঢোল পিটিয়ে দেয়। আমি এই প্রচলিত প্রথা ভাঙতে আর সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি। কেউ মজা পেয়েছে কিনা জানি না কিন্তু এমন চমক দিতে পেরে আমি কিন্তু মহাখুশি। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর মা হন শাবনূর। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পুত্র সন্তান আইজান জন্ম নেয়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে ফেরেন। দীর্ঘদিন পর চলতি মাসে আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। বেশ কবছর আগে শুরু করা 'পাগল মানুষ' ছবির বাকি কাজ শেষ করেন শাবনূর।
তাহলে এখন থেকে নিয়মিত অভিনয় করবেন?
না, এখনই নিয়মিত হবো না। আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। ভাই-বোনকে নিয়ে মজা করে ঈদ আনন্দ শেষে ফিরব। তারপর রয়ে-সয়ে না হয় নিয়মিত হবো।
আবার অস্ট্রেলিয়া যাওয়া। তার অর্থ সহসা আর ফেরা নয়, তাই নয় কি?
না, না, এবার এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। ভাই-বোন সবাই ওখানে। তা ছাড়া আমি অস্ট্রেলিয়ারও নাগরিক। মানে আমার সেকেন্ড হোম অস্ট্রেলিয়া। তাই ছুটির সুযোগে কিছুটা সময় সেখানে কাটিয়ে আসতে চাই। যদি নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা না থাকত তাহলে কি সহকারী পরিচালক সমিতির সদস্য হতাম? শুধু অভিনয় নয়, নির্মাণেও আসব এবার।
মানে এবার নির্মাতা শাবনূরকে পাচ্ছে দর্শক?
হ্যাঁ, এবার নির্মাণে আসব। মানে এটি আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস। তবে এ ঘোষণা অনেক পুরনো। সংসার-সন্তান নিয়ে ব্যস্ততার কারণে একটু দেরি হয়ে গেল। এ বছরই নির্মাণ কাজ শুরু করার ইচ্ছা আছে।
আগের কিছু ছবির কাজও তো বাকি রয়ে গেছে-
'স্বপ্নের বিদেশ' ও 'অবুঝ প্রেম' শিরোনামের দুটি ছবির কাজ বাকি আছে। এগুলো অবশ্য প্রযোজকের সমস্যার কারণে শুরু হচ্ছে না। যখন তারা চাইবেন তখনই কাজ শেষ করে দেব।
সেকেন্ড ইনিংসে কেমন শাবনূরকে পাচ্ছে দর্শক?
একেবারে জিরো ফিগারের ফুরফুরে শাবনূরকে পাবে দর্শক। আমি বেশ অলস মেয়ে। কাজ না থাকলে ঘুম আর খাওয়া আমার খুব প্রিয়। এই প্রিয় কাজগুলো বেশি প্রশ্রয় দিতে গিয়ে বেশ মুটিয়ে গেছি। কিছুটা সময় নিয়ে কসরত করে আবার স্লিম মানে জিরো ফিগারের শাবনূর হয়ে ফিরব। না হয় দর্শক মুটিয়ে যাওয়া শাবনূরকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এমনটা মোটেও চাই না। হয়তো ২৩ বছর আগের শাবনূর হতে পারব না। তবে কিছুটা হলেও জিরো সাইজ তো হতে পারব। ওতেই চলবে।