কামরুজ্জামানের ফাঁসি হওয়ার পর বাংলাদেশের কি কোনও পরিবর্তন হবে? জামাতির সন্ত্রাস বন্ধ হবে?শিবিরের হত্যাকাণ্ড থামবে? অভিজিৎরা আর খুন হবে না? ওয়াশিকুরদের কেউ মারবে না? বাংলাদেশকে আমি কোনও রাষ্ট্র বলে মনে করিনা। আমি মনে করি ওটা একটা যুদ্ধক্ষেত্র। যেখানে যুদ্ধ চলছে মৌলবাদী সন্ত্রাসী আর ধর্মনিরপেক্ষ/ধর্মমুক্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মধ্যে। অনেকে ভুল করে, ক্ষমা চায়, নিজেকে শোধরায়। তাদের ক্ষমা করে দেওয়া যায়। কামরুজ্জামান যদি একবারও ভাবতেন যে তিনি একাত্তরে অন্যায় করেছিলেন, তবে তিনি আর যাই করতেন, জামাতি ইসলামির মতো একটা সন্ত্রাসী দলের নেতা হতেন না। বাংলাদেশের যে ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন সন্ত্রাস দেখতে দেখতে ক্লান্ত, তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিতে। আমার মনে হয় রাগটা যত না ৪৪ বছর আগের সন্ত্রাসের জন্য, তার চেয়ে বেশি এখনকার সন্ত্রাসের জন্য, কামরুজ্জামানের শিষ্যরা বুক ফুলিয়ে যে সন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে। মানুষ বাধ্য হচ্ছে ঘোর অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করতে প্রতিদিন। এই যুদ্ধক্ষেত্রে মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা ধর্মমুক্ত মানুষদের ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করছে। সন্ত্রাসীদের বিরোধী শক্তি যেহেতু হাতে চাপাতি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় না, তারা একটা অচল অথর্ব রাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে দুএকটা খুন ঘটায়। যুদ্ধক্ষেত্রের নানারকম হিসেব হয়তো থাকে।
কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না, সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশটি, স্বয়ং আমেরিকা, কেন ছুটে এলো কামরুজ্জামানের ফাঁসি বন্ধ করতে! যেসব দেশ মৃত্যুদণ্ডকে নিষিদ্ধ করেছে, সেসব দেশ ফাঁসি বন্ধ করার অনুরোধ করলে মানাতো। আমেরিকা, আগে তো তুই নিজের দেশের মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করবি, তারপর তো সওয়াল করতে বেরোবি। কে আমেরিকাকে এই ব্যাপারে নাক গলাতে বলেছিল, সৌদি আরব? হবে হয়তো। আমেরিকা অবশ্য নিজেই একাত্তরে আমাদের শত্রুপক্ষের লোক ছিল। কামরুজ্জামাদের দোসর ছিল।
বাংলাদেশের মানুষ এবার পেছনে কবে কী করেছিলো ভুলে এখন কে কী করছে সেটা দেখুক। এখন থেকে যেন জামাতিরা কোনও সন্ত্রাস, কোনও রগ কাটা, গলা কাটা, বোমা ছোড়া কিছুই করতে না পারে। মাদ্রাসা মসজিদের আতংকবাদী রাজনীতি আর অশ্লীল ওয়াজ মাহফিলগুলো বন্ধ না করলে শুধু কামরুজ্জামানদের মেরে কোনও ফল পাওয়া যাবে না।
-তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
বিডি-প্রতিদিন/১২ এপ্রিল ২০১৫/ এস আহমেদ