তখনো আমানত হলের টিভি রুমটার উদ্বোধন হয়নি। সবেমাত্র কাজ শেষ হয়েছে। আমরা তিনজন বিছানা ফেলে সেখানে থাকতে শুরু করলাম। ফার্স্ট ইয়ারের তিনটা ছেলে হলের পুরো টিভি রুম দখল করে থাকতে শুরু করেছে- এটা যে কতো বড় ঘটনা- সেই সময়ে সেটা আমরা কেউই বুঝে উঠতে পারিনি। কিছু একটা করে ফেলেছি, এটা টের পেলাম যখন ছাত্রনেতারা একে একে আসতে শুরু করলো।
হল তো বটেই, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নেতারাও আসতে শুরু করলেন, আলাপের শুরুতেই জানিয়ে দিলেন তিনি অমুক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট, অমুক সংগঠনের সেক্রেটারি। বেশ কয়েক দিন পর হালকা পাতলা গড়নের দীর্ঘাকৃতির একজন এলেন, তার কথাবার্তা একটু আলাদা মনে হলো। তিনি একটি বারের জন্যও কোনো দলের কথা বলেন না, নিজের পরিচয়টাও ঠিক মতো দিলেন না। আমাদের অবস্থাটা জানতে চাইলেন, যাওয়ার সময় বলে গেলেন, আপনারা এখানেই থাকেন, হল কর্তৃপক্ষ সিট দিয়ে আপনাদের এখান থেকে সরাবে। সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন, আমার নাম নাসিম।
'আমার নাম নাসিম’- কেবল এইটুকু পরিচয় দেয়া লোকটার কথায় আমাদের সাহস যেনো বেড়ে গেলো, সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তিন তরুণের (আমি, রানা এবং রনি) কাছে নাসিম কেবল একটি নামমাত্র, এর বেশি কিছুই জানা ছিলো না। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সে পরিচয়টাও না। অথচ আমরা কেমন নির্ভার হয়ে গেলাম, মনে হলো এই ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে আমাদের একজন অভিভাবক আছেন।
নাসিম ভাই সত্যি সত্যিই ক্যাম্পাসে আমাদের অভিভাবক ছিলেন। শিক্ষাজীবন শেষে বিসিএস করে ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেয়া নাসিম ভাই, প্রধানমন্ত্রীর প্রোটোকল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এক সময় সামনের রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে দলের জন্য পেছন থেকে কাজ করাকেই ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি যেনো আজীবনের অভিভাবকই হয়ে থাকলেন। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ই বলি কেন, রাজনীতিতেও তিনি ‘কিং’ হতে চাইলেন না, নেপথ্যের ‘কিং মেকার’ হয়েই রইলেন।
নাসিম ভাই মাঝে মধ্যে টরন্টো আসেন, আমাদের সাথে দেখা সাক্ষাত তেমন একটা হয় না। এবার জানিয়ে রেখেছিলাম- টরন্টো এলে আমাদের জন্য সময় রাখতে হবে। কথাটা বলেও অনেকবার ভেবেছি, আমাদের জন্য নাসিম ভাই আলাদা করে সময় রাখবেন কেন? এবার টরন্টো এসে তিনি নিজেই যেনো এর উত্তর দিয়ে দিলেন। অভিভাবককে সবার জন্যই সময় রাখতে হয়, দ্বিতীয় দিনের মতো ডাউন টাউনে নাসিম ভাই এর সাথে সময় কাটাতে গিয়ে বার বার মনে হলো, নাসিম ভাই এখনো আমাদের অভিভাবকই।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন