জীবনে কারসাজি করে অনেকসময় টাকা জমিয়েছি শুধু সিনেমা দেখার জন্য। অবশ্যই বাংলা সিনেমা। তখন সিনেমাগুলো ছিল পারিবারিক বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। আব্বা-আম্মাও উৎসব করে সিনেমা দেখতে হলে নিয়ে গিয়েছেন। ঈদের সময় নতুন সিনেমার জন্য অপেক্ষা করাই ছিল আরেকটা উৎসব। তখন সিনেমাকে কেউ ব্যঙ্গ করে 'ছি-নেমা' বলতো না। টিকেট কাটা সহজ করার জন্য পকেটে করে চোখ ঝাঁঝালো “গুল” নিয়ে যেতাম, সিনেমা হলের কাউন্টারে খুব ভিড় হলে চুপি চুপি গুল ছড়িয়ে জায়গা ফাঁকা করে নিতাম। স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখে অনেক মার খেয়েছি।
ওই সময় ইত্তেফাক পত্রিকাই শুধু খুঁজে বের করতাম মধ্যে পাতায় নতুন নতুন সিনেমার বিজ্ঞাপন দেখার জন্য। দুপুর বেলা কানের পাশে নিয়ে রেডিও শুনতাম মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমাগুলোর ভরাটকণ্ঠের বিজ্ঞাপন শোনার জন্য। বৃহস্পতিবার কিংবা শুক্রবার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কখন স্থানীয় সিনেমা হলগুলোতে মুক্তি প্রাপ্ত ছবির মাইকিং করতে আসবে। এ ফোর সাইজের সিনেমার সাদাকালো পোস্টারগুলোর জন্য মাইকিং ম্যানের রিকশার পিছনে দৌড়াতাম পোস্টার হাতে না পাওয়া পর্যন্ত। এমন হয়েছে যে বৈশাখী মেলায় সিনেমার পোস্টারের স্টলে বেশি ভিড় থাকতো। সিনেমার নায়কদের এতটাই অনুকরণ করতাম যে নায়ক আলমগীরের মতো গলায় মাফলার ঝুকিয়ে হেলেদুলে হাঁটতাম, জাফর ইকবালের মতো শর্টস্লিপ/ ম্যাগী হাতা পোলো টিশার্ট পরতাম।
কোনো সপ্তাহ মিস যেত না। সপ্তাহে দুইটি সিনেমাও দেখেছি। এমনও সময় গেছে এক সিনেমা হলে ৩টা -৬ টার শো দেখে অন্য সিনেমা হলে গিয়ে ৬টা-৯টার শো দেখেছি। এখন আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয় না। ছেড়ে দিয়েছি ১৯৯৬ সালে, যখন বাংলা সিনেমার বরপুত্র সালমান শাহ মারা গেলেন। তার অভিনীত প্রতিটি সিনেমাই হলে গিয়ে দেখেছি।
বাংলা সিনেমার রাজপুত্রের আজ প্রয়াণ দিবস। অনেক শ্রদ্ধা...
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা