ঘটনা ১. আমার এক শিক্ষক চাকরি থেকে অবসরে গেছেন ২০০২ সালে। এখন স্যারের বয়স ৭৩/৭৪। বেশিও হতে পারে। ম্যাডামের (স্যারের স্ত্রী ) বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। ওনাদের দুই ছেলে-মেয়ে। আমার জানা মতে, দুইজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তারা পিএইচডি করতে উন্নত দেশের দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান ২০০৫/২০০৬ সালের দিকে। কেউ আর দেশে ফিরে আসেননি। দুইজন দুই দেশে মোটামুটি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বাবা-মা’কে নিয়েও যাননি। স্যারের টাকা-পয়সার অভাব নেই। কিন্তু দেখাশুনা করার কেউ নেই। বৃদ্ধদের কোন আত্মীয়-স্বজনও থাকে না।
স্যারের সাথে কিছুদিন আগে দেখা হয়েছিল। জানলাম, একজন কাজের মহিলা ওনাদের দেখাশুনা করেন। দুই বেলা এসে রান্না করে দিয়ে যায়। অনেক কথা বলার পর এক সময় স্যার বলেই ফেললেন, সন্তানদের বেশি মানুষ করতে নেই। তারা তখন বাবা-মায়ের থাকে না। বুঝতে পারলাম কতটা কষ্ট বুকের মধ্যে নিয়ে স্যার কথাটা বলে ফেললেন।
ঘটনা ২. রাতে রিক্সায় করে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ অল্পবয়সী রিক্সাওয়ালা ছেলেটার মোবাইল ফোন বেজে উঠলো। ওই পাশ থেকে কে ফোন করেছিলো, কিছুটা আন্দাজ করতে পারলাম।
তবে ছেলেটার কথা ছিল ঠিক এই রকম, আমার আব্বা আমার দাদা-দাদিরে খাওয়াইছে, পরাইছে। আমিও আমার আব্বারে-মায়েরে খাওয়াবো। আপনার মাইয়া মানতে পারলে সংসার করুক, না পারলে না করুক।
কথাটা বলে ফোনটা পকেটে রেখে দিলো। যেন কিছুই হয়নি। রিক্সা চলছে।
বিরাট বিরাট শিক্ষিত হয়ে কয়জন ছেলে এইভাবে বলতে পারে? ধন্য ওই রিক্সাওয়ালার বাবা-মা। সন্তান প্রকৃত মানুষ হওয়া বলতে হয়তো এটাই বুঝায়।
লেখক: উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা