BCPS (বিসিপিএস)- আমরা কি উল্টো পথে হাঁটছি? সব দায়বদ্ধতা কি শুধু তরুণ চিকিৎসকদের?
তাদের প্রতি কি আপনাদের কোন দায়িত্ব নাই….
এই মুহূর্তে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা নাকি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া??
উচ্চশিক্ষার সিঁড়ি ভেঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হবার বিভিন্ন ধাপের পরীক্ষাগুলো জুলাই এবং জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয় আমাদের দেশে।
তরুণ চিকিৎসকদের প্রায় সকলেই ভিন্ন ভিন্ন ধাপ (এফসিপিএস পার্ট ১/২, এম ডি/এম এস ১ম/২য়/৩য় পর্বে) অধ্যয়নরত বা সুযোগ পাবার জন্য পড়ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সকল স্বাস্থ্যকর্মী যখন মহামারি মোকাবেলায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।
সে মুহূর্তে পূর্বনির্ধারিত সময়েই এসব পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।
ইতোমধ্যে দেশের সকল পাবলিক পরীক্ষাও পেছানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা শাস্ত্রের সকল উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলোতে (রয়েল কলেজসহ) যখন পোস্ট গ্রাজুয়েশন পরীক্ষা (FRCS, MRCS, MRCP) পিছিয়ে দিয়ে চিকিৎসকদের মানসিক চাপ কমানো হচ্ছে, আমরা সেখানে যথাসময়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন পরীক্ষার (FCPS) সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়ে তাদের দ্বিগুণ চাপে ফেলছি।
এতে কোভিড মহামারির সুষ্ঠু চিকিৎসায় যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে, তার দায়ভারকে নেবে??
কারিকুলামে অংশ হিসেবে যারা শিক্ষা ছুটিতে ছিলেন
সরকারি নির্দেশে তাদের একটা বিরাট অংশ বর্তমানে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে সেবা দিচ্ছেন। অথচ এই সময়টায় তার শুধুই পড়াশুনা,
গবেষণা (থিসিস) নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা।
সারাদেশ থেকে রাজধানীতে এসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও আনুষাঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সংক্রমণের যে ঝুঁকি রয়েছে তার দায়ভার কে নেবে??
আবাসনের হোটেল/হোস্টেল এই মুহূর্তে ঝুঁকিমুক্ত কি?
বা আদৌ সহজলভ্য?
ঠিক ওই সময় হয়তো কোন পরীক্ষার্থী করোনা ওয়ার্ডে ডিউটিরত/কোয়ারেন্টাইন/হাসপাতালের বেডে। তার মাথার উপর এ খড়গ ঝুলিয়ে দেয়াটা আসলে কতটুকু যৌক্তিক?? তার প্রস্তুতির সময়টাইবা সে কোথায় পাচ্ছে??
নাকি সবকিছু বিসর্জন দিয়ে কোভিড মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পরাটা তার অন্যায়??
অনেক চিকিৎসক (বেসরকারি) যেখানে নিজের বেতনটুকুও পাচ্ছেন না, সেখানে পরীক্ষার উচ্চ ফি যোগাড় করাও একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে ভেবে দেখবেন কি?
পরীক্ষার অংশ হিসেবে রোগীকে পরীক্ষা করা কিংবা প্রস্তুতির জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে রোগীদেখা এই মুহূর্তে আসলে কতটা যৌক্তিক?
এই সময়টাতে অনেক অপ্রতুলতার মধ্যে এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন, প্রায় হাজার খানেক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন যাদের অনেকেই পরীক্ষার্থী।
যে এক একটি জীবন তারা বাচিয়ে তুলছেন, তার প্রতিটি পরীক্ষার চাইতে অনেক মূল্যবান।
সংশ্লিষ্ট সকল চিকিৎসক শিক্ষক ও BCPS এর নীতিনির্ধারকগণ আপনাদের বলছি-
আপনারা কি একবার ভেবে দেখবেন এই তরুণ চিকিৎসকগণ কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে?
তারা কিভাবে যুদ্ধ করছে, তাদের মানসিক অবস্থা কি?
তাদের জন্য কি একটুও মায়া হয় না আপনাদের?
পুনশ্চ: ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না…
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত