দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের কারাগারে কাটানোর পর অবশেষে উত্তর পূর্ব ভারতের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম (আলফা) নেতা অনুপ চেটিয়াকে ফেরত পেল ভারত। বুধবার সকালে বাংলাদেশ সরকারের তরফে চেটিয়াকে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে হস্তান্তর করা হয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে যোগ হয় নতুন মাত্রা।
এবার চেটিয়ার বিনিময়ে কলকাতার কারাগারে বন্দি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের আসামি নূর হোসেনকে খুব শিগগির বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে চলেছে ভারত।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও বরিষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনের অপহরণ ও খুনের ঘটনায় প্রধান আসামি নূর হোসেনকে গত বছরের ১৪ জুন রাতে কলকাতার কৈখালি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গের বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের বিশেষ পুলিশ বাহিনী। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪ বিদেশি নাগরিক আইন (ফরেনারস অ্যাক্ট) লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। বর্তমানে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন নূর। এরই মধ্যেই নূরকে ফেরত পেতে বাংলাদেশ সরকারের তরফে ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানানো হয়।
বাংলাদেশ সরকারের আর্জি মেনেই নূরকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তৎপর হয় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের তরফে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি জানানো হয়। সেইমতো ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী নূর হোসেনের বিরুদ্ধে থাকা সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চলতি বছরের গত ২০ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে আবেদন জানানো হয়। নূরকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করতে গত ১৬ অক্টোবর নূরের বিরুদ্ধে থাকা সমস্ত অভিযোগই প্রত্যাহার করে নেয় পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা দায়রা আদালত। একইসঙ্গে নূরকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে উত্তর চব্বিশ জেলা প্রশাসনকে দুই মাস সময়সীমাও বেঁধে দেয় আদালত। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই নূরকে ফেরত পাঠানোর বিষয় সম্পর্কিত প্রক্রিয়া শেষ করে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতেও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতের নির্দেশ মেনে নূর হোসেনকেও বাংলাদেশের তাতে তুলে দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত মাসে পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা, লক্ষ্মী পূজা ও মহরমের ছুটি থাকায় সেই প্রক্রিয়ায় কিছুটা ভাটা পড়লেও ছুটি শেষ হতেই ফের বিভিন্ন দফতরে চিঠি চালাচালি শুরু হয়েছে বলে খবর। নিয়ম মেনে নূর হোসেনের বন্দি প্রত্যর্পণের কাগজপত্র চূড়ান্ত হলে বিধাননগর ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলাশাসক, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)'র সঙ্গে সঙ্গে সমন্বয় করে দিনক্ষণ ঠিক করেই যত শিগগির সম্ভব নূরকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদারকে মুঠো ফোনে বলেন, ‘নূর হোসেনকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশ মেনে ১৫ ডিসেম্বরের আগেই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে’।
বিডি-প্রতিদিন/ ১১ নভেম্বর, ২০১৫/ রশিদা