ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মনে করেন ‘স্বাধীনতার সময় গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের জাতীয়তাবাদী অনুভূতির একটা শক্তিশালী ভাবমূর্তি তুলে ধরেছিল। আসলে গুরুদেব চেয়েছিলেন গোটা মানবজাতি ভারতের আধ্যাত্মিক জাগরণ থেকে উপকৃত হোক। ‘আত্মনির্ভর ভারত’এর দৃষ্ঠিভঙ্গি হল এই অনুভূতিরই একটি অংশ।’
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই মন্তব্য করেন তথা বিশ্বভারতীর আচার্য নরেন্দ্র মোদি। গেরুয়া পাঞ্জাবি ও সাদা রঙের শাল গায়ে দিয়েই এদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
‘হে বিধাতা দাও, দাও, মোদের গৌরব দাও’ রবীন্দ্রনাথের এই বাণী দিয়েই নিজের বক্তব্য শুরু করেন তিনি। বিশ্বভারতীর আচার্য, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী-সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘গুরুদেবের চিন্তা, দর্শন ও পরিশ্রমের ফল বিশ্বভারতী। কবি ভারতের জন্য যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার বাস্তব রূপ বিশ্বভারতী। এই বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ভারতের নির্মানে সমস্ত রকম প্রয়াস করে চলেছে। ভারত নির্মাণে বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতন হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করছে। প্রকৃতির সাথে অধ্যায়ন ও জীবনের উদাহরণ এই বিশ্ববিদ্যালয়। কবিগুরুর এই প্রতিষ্ঠান দেশকে শক্তি জুগিয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনেও বিশ্বভারতীর অবদান রয়েছে।’
বিশ্বভারতীর সাবেক শিক্ষার্থী বিশ্বখ্যাত গীতিকার, সুরকার, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, চিত্রকর-যারা এই ভারত নির্মাণে যোগ দিয়েছেন তাদেরও অভিনন্দন জানান মেদি। তাঁর অভিমত ‘জ্ঞানের আন্দোলনকে বিশ্বভারতী নতুন পথ দেখিয়েছে-যাতে রাষ্ট্রবাদের নতুন দিক প্রসারিত হয়েছে। ভারতের চিন্তার ধারা কবির দর্শনেও ছিল। এই দর্শনই বিশ্বকে ভারতের সাথে পরিচিত করেছে।’
তিনি বলেন ‘ভারতের আত্মা, আত্মনির্ভরতা ও আত্মসম্মান-একে অপরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। ভারতের আত্মসম্মান রক্ষার জন্য বাংলা নিজেদের উৎসর্গ করেছিল। ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদর, বীণা দাস-এরকম অসংখ্য মানুষ আছে যারা দেশের জন্য হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করেছে।’
ভারতকে আত্মনির্ভর করে তুলতে বাংলার সংযোগের কথাও বলতে ভোলেন নি মোদি। তিনি বলেন ‘বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর ভারত স্বাধীন হয়েছিল। নতুন ভাবে জেগে উঠবো আমরা। আমাদের শক্তি জোগাবে গুরুদেবের কথা ও দর্শন।’
করোনার আবহে এবার শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার আয়োজন করা যায়নি। তাই যে সব শিল্পীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করার জন্য এখানে আসতে পারেননি তাদের উদ্দেশ্যেও বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন ‘এই অবস্থায় বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীদের কাছে আর্জি জানাই তারা যেন পৌষমেলায় আসা শিল্পীদের সাথে কথা বলে কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করা যায় তা ভেবে দেখুক।’ এপ্রসঙ্গেই মোদির বার্তা গুরুদেবের সেই অনুপ্রেরণামূলক মন্ত্রকে স্মরণ করতে হবে- তিনি বলেছিলেন ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে...’।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন