নারায়ণগঞ্জ জেলায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। একের পর এক খুন ও অপহরণরে পর হত্যায় জেলা এখন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে লাশ উদ্ধার হয়েছে ৪টি। এছাড়া গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়েছে। হত্যার আগে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা সপ্তাহ দিন ও মাসব্যাপীও নিখোঁজ ছিল। কিন্তু জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের জীবিত উদ্ধার করতে না পারলেও লাশ উদ্ধারে সফলতা দেখান।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সকাল ১০টায় শহরের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকার একটি ডোবা থেকে শিপলু বেপারী (২৮) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিল। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় ফতুল্লার দেওভোগ মাদ্রাসা রোডের নূর মসজিদ এলাকায় রকিবুল হাসান রনি (২৬) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সন্ধ্যা ৭টায় কাশীপুর ইউনিয়নের আল হোসাইনী মার্কেট সংলগ্ন একটি ডোবা থেকে শোয়েব (২২) নামের এক হোসিয়ারী ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একই দিন বিকাল ৫টায় সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুরের একটি দোকান থেকে অর্ধগলিত অজ্ঞাত (৩০) এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত বুধবার আড়াইহাজারে মাহফুজ নামের ২ বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। সে ৩ দিন নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে শুক্রবার বিকাল ৫টা হতে শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪টি লাশ উদ্ধার করা যারা সবাই হত্যাকাণ্ডের শিকার।
গত ১ বছরে জেলার শিক্ষার্থী হত্যার এক জরিপে দেখা যায়, চলতি ২১ জানুয়ারি উপজেলার কাঁচপুর এলাকা থেকে দুই স্কুল ছাত্র জাহিদুল ইসলাম ও সাকিন আলম অপহরণের পরে ২২ জানুয়ারি সকালে উপজেলার সাদিপুর ইউপির ভারগাঁও বেড়িবাঁধ এলাকায় জাহিদের বস্তাবন্দী গলাকাটা লাশ ও ২৬ জানুয়ারি সাকিন আলমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৯ জানুয়ারি ২ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের পর ৩৬ দিন নিখোঁজ থাকা বন্দর উপজেলার স্কুল ছাত্র রফিকুল ইসলাম ইমনের (১৪) লাশ একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ১ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জে নাঈম মিয়া (১৪) নামে এক স্কুল ছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার পিঠালিপুল এলাকার স্কুল ছাত্র মোস্তফা মিয়াকে (১২) সামান্য মোবাইল ফোনের জন্য খুন করে বখাটেরা। ৫ মার্চ নিখোঁজের ১১ দিন পর ১৬ মার্চ সদর উপজেলার গোগনগর এলাকার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সাব্বিরের লাশ একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। গত বছরের ৮ নভেম্বর গভীর রাতে মদনগঞ্জ শান্তিনগর এলাকায় ডাকাতদের গুলিতে স্কুল ছাত্র সালমান ঘটনাস্থলে নিহত হয়। ২২ নভেম্বর অপহরণের পর নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইরে আদর্শ স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম আহমেদকে (১০) অপহরণের পর ২৩ নভেম্বর তাকে হত্যা করা হয়।
গত বছরের ২৩ এপ্রিল বিকালে ইসদাইর বাজার এলাকার ভ্যানচালক আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে কৃতী ফুটবলার রাসেলকে পূর্ব ইসদাইর এলাকায় ডেকে নিয়ে হত্যা করে বখাটেরা। ফতুল্লার বক্তাবলীর চর রাধানগর এলাকার রমজান মিয়ার ছেলে বক্তাবলী কানাইনগর সোবাহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ইমন হোসেনকে ১৩ জুন রাতে ডেকে নিয়ে বাড়ির পাশের শস্যক্ষেতে হত্যা করে লাশ ৯ টুকরা করে ফেলে রাখে। ৭ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকার ৯০ নং জালকুড়ি পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্র অপহরণকারীর হাতে নির্মমভাবে খুন হয় রমজান শিকদার। ২২ জুলাই আড়াইহাজারে একটি স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র মাহাবুবকে হত্যার পর নাক ও কান কেটে নেওয়ার পাশাপাশি চোখ উপড়ে ফেলে। ৯ জুলাই ফতুল্লার পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র নাজমুল হোসেন (১৭) নামের এক স্কুল ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রেম সংক্রান্ত বিরোধে ৩ জুলাই রূপগঞ্জের সিনহা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মৌসুমী আক্তারকে (১৮) পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সোনারগাঁও উপজেলায় ৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর সোয়েব নামের ৫ বছরের এক মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই খুন হওয়ার আগে মাস, দিন ও সপ্তাহব্যাপী অপহরণের পর নিখোঁজ থাকে।