টানা অবরোধে চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। আজ শুক্রবার ছুটির দিনেও মেলেনি এ থেকে মুক্তি। সকাল থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেছে যানবাহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। ফুটছে ককটেল। জরুরি কাজ থাকলেও বাতিল করতে হচ্ছে দূরের যাত্রা। মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হলেও শঙ্কায় ছাড়ছে না দূরপাল্লার বাস।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সকালেই নারায়ণগঞ্জে অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধ সমর্থকরা। পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ গেট এলাকায় শুক্রবার সকাল ৭টার দিকেই টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকসা ভাঙচুর করে। বগুড়ার ধুনট উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে অবরোধ সমর্থনকারী বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষে দু’জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। মুন্সীগঞ্জে যাত্রী নামিয়ে বাসে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়কে সকালেই টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে অবরোধকারীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। সারাদেশেই চলছে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা।
সহিংসতার আশঙ্কায় শুক্রবার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দূরপাল্লার বাস তেমন একটা ছেড়ে যায়নি। দুইদিন ছুটি মিললেও গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়নি সরকারি চাকরিজীবীদের। অনেকে দূরে যাওয়ার জন্য আগে থেকে শুক্রবার দিনটি ঠিক করে রাখলেও অবরোধ না তোলায় যাত্রা বাতিল করেছেন। তবে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি পরিবার-পরিজনসহ ভাঙা পথে রওয়ানা করেছেন। পথে নেমেই যানবাহনের অভাবে বিপাকে পড়েছেন।
পিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে অংশগ্রহণের জন্য শুক্রবার সকালে রাজধানী থেকে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে ভাঙা পথে যাত্রা করেছেন মুদি ব্যবসায়ী হামিদ আলী। তিনি বলেন, 'সরাসরি কোন বাস না পেয়ে ভাঙা পথে মাওয়া পর্যন্ত এসেছি। আজই আব্বার মৃত্যুবার্ষিকী। অবরোধের কারণে গতরাতে যেতে পারিনি। এজন্য ভোরবেলায় সবাইকে নিয়ে ভাঙা পথে রওয়ানা করেছি। নদী পার হয়ে গাড়ি পাব কিনা জানি না। সঙ্গে বৃদ্ধ মা, ছোট দুই বাচ্চা। খুবই বিপদে আছি। কীভাবে পৌঁছাব জানি না।'
এদিকে অবরোধের কারণে বিশ্ব ইজতেমায়ও লোকসমাগম তুলনামূলক কম হয়েছে। অনেকে দূর দূরান্ত থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে এসেছেন তুরাগ তীরে। যারা আসতে পেরেছেন তাদের মধ্যে স্বস্তি আসলেও শঙ্কা কাটেনি। ভয়- ফিরতি পথে যদি আগুন-ভাঙচুরের মধ্যে পড়তে হয়।
যশোরের মনিরামপুর নিহালপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম (৫০) ইজতেমায় শামিল হয়েছেন অনেক কষ্টে। বলেন, 'ভোগান্তি সঙ্গে করে ইজতেমায় শামিল হতে পারলেও বাড়ি ফিরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে। মারামারি কাটাকাটির মধ্যে পড়ে যেতে পারি। আমরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারি সেই দিকটা যেন সরকারি ও বিরোধীদল বিবেচনা করে।'
তিনি বলেন, হরতাল ও অবরোধের কারণে এবার কিছুটা হলেও মুসল্লি কম হয়েছে। অবরোধের কারণে গাড়ি রিজার্ভ করতে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। অনেকে বাড়তি ভাড়া ও অবরোধ আতঙ্কে আসেননি। রফিকুলের জিম্মাদারে প্রায় ৬০ জন আসার কথা থাকলে এসেছেন মাত্র ৪০ জন। এতে করে ২০ জনের বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে তাদের।
তিনি বলেন, ২০ জনের টাকা সাথীদের কাছ থেকে নিয়ে দিতে হবে। ২০ জন এলে আমরা আরো কম টাকায় আসতে পারতাম।
ইজতেমায় উপস্থিত মুসল্লিরা বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় জমায়েতের বিষয়টা অন্তত আমাদের রাজনীতিবিদদের বিবেচনা করা উচিত ছিল। যে রাজনীতি শুধু মানুষের ভোগান্তিই বাড়ায়, দেশের ক্ষতিই করে সেই রাজনীতি কাদের জন্য?
বিডি-প্রতিদিন/০৯ জানুয়ারি ২০১৫/আহমেদ