হোলি আর্টিজান হামলা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির কাছে আইএসের পতাকা সংবলিত টুপি রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। পুলিশ বলছে, এই টুপি জঙ্গিদের কাছেই ছিল। কারাগার থেকেই তারা নিয়ে এসেছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের বক্তব্য, কারাগার থেকে কোনো আসামিকে আদালতে পাঠানো হলে তাকে বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে তল্লাশি করা হয়। হোলি আর্টিজান মামলার আসামিদেরও একই নিয়মে কারাগার থেকে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। কারাগার থেকে এই টুপি নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
নিম্ন আদালতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও হলি আর্টিসান মামলায় দণ্ডিত দুই আসামির মাথায় আইএসের চিহ্ন সম্বলিত টুপি কীভাবে এল তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে 'সর্ষের ভেতরে ভূত' আছে বলে মন্তব করেছেন হাইকোর্ট। আজ রবিবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক মামলার শুনানির পর পত্রিকার প্রতিবেদন ও আইএস নিয়ে কাজ করা আইনজীবীর নিরপত্তার প্রসঙ্গ টেনে এ বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ সময় আদালতে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, আইএসের টুপি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। পত্রপত্রিকায় আইএসের টুপি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। আমি তো আইএস ইস্যুতে কথা বলেছি। এখন তো আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।
তখন হাইকোর্ট বলেন, মানবাধিকার কর্মীদের বুকে সাহস নিয়ে থাকতে হবে। এ আইনজীবী আদালতকে আরও বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা এ বিষয়ে জানে না। অন্যদিকে কারা কর্তৃপক্ষও বলছে টুপি কারাগার থেকে আসেনি। তাহলে আই এসের টুপি দিল কে? ফেরেশতা নাকি শয়তান?
এরপর হাইকোর্ট বলেন, সর্ষের ভেতরে ভূত। পরে আইনজীবী জেড আই খান পান্নার নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে (ডিএজি) হাইকোর্টের মৌখিক নির্দেশনা দেন।
গত ২৭ নভেম্বত রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ের পর বুধবার আদালত থেকে বের হয়ে এলে কয়েকজন আসামির মাথায় কথিত আইএসের প্রতীক সংবলিত টুপি দেখা যায়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও জঙ্গিদের কাছে এই টুপি কীভাবে এলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে সব মহলেই। তবে টুপি পৌঁছানোর মাধ্যম প্রসঙ্গে প্রাথমিকভাবে কেউ নিশ্চিত কিছু জানাতে পারেনি।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে টুপি বিষয়টি তদন্তের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিকেলেই কারা কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ ব্যাপারে ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার ডিএমপির তদন্ত কমিটি জানায়, কারাগার থেকে আসামিরা পকেটে করে এ টুপি আদালতে এনেছিলো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। কমিটির প্রধান ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে জানান, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিগ্যান কারাগার থেকে পকেটে করে টুপি নিয়ে আদালতে এসেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে আরো কারা জড়িত বিষয়টি তদন্তের পর স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ