দুই বছর আগে সিঙ্গাপুরের হোটেলে ইন্দোনেশীয় প্রেমিকাকে হত্যার দায়ে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার সিঙ্গাপুরের একজন জুডিশিয়াল কমিশনার এই রায় দেন।
সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তির নাম সেলিম আহমেদ। বয়স ৩১ বছর। তিনি পেশায় একজন রঙমিস্ত্রি। আর তার ইন্দোনেশীয় বান্ধবীর নাম ছিল নুরিদাইয়াতি ভারতোনো সুরাত। তিনি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশীয় ওই তরুণী আরেক বাংলাদেশির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। সেই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি সেলিম আহমেদ। তিনি ওই সম্পর্ক ত্যাগ বলেন। কিন্তু তরুণী তা করতে রাজি না হয়নি। পরে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর গেইলাংয়ের গোল্ডেন ড্রাগনস নামক একটি হোটেলের কক্ষে ওই তরুণীকে হত্যা করেন সেলিম।
বিচারক যখন সেলিমকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন, তখন তিনি নির্বিকার ছিলেন বলে খবরে বলা হয়েছে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০১২ সালের মে মাসে সেলিম ও নুরিদাইয়াতির পরিচয় হয়। এরপর তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। এক সময় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা। পরে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে নুরিদাইয়াতি সম্পর্কে জড়ান সামিজুর রহমান সামিন নামে আরেক বাংলাদেশি কর্মীর সঙ্গে। এ নিয়ে নুরিদাইয়াতির সঙ্গে সেলিমের বাগবিতণ্ডা হয়। নুরিদাইয়াতি নতুন সম্পর্কের কথা স্বীকারও করেন। এরপর সেলিম দেশে তার মাকে তার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে বলেন। পাত্রী খুঁজে পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়েও ঠিক হয়। কিন্তু তার আগেই নুরিদাইয়াতির সঙ্গে সেলিমের আবার মিটমাট হয়ে যায়। কিন্তু নুরিদাইয়াতির অন্য সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে মাঝেমাঝেই ঝগড়া হচ্ছিল। একটি ঘটনায় এক হোটেল কক্ষে সেলিম তার বান্ধবীর মুখে তোয়ালে চেপে ধরেছিলেন।
এরপর ২০১৮ সালের শেষদিকে ফেসবুকে মোহাম্মদ আবু হানিফ নামে আরেক বাংলাদেশির সঙ্গে নুরিদাইয়াতির পরিচয় হয়। একপর্যায়ে সেলিমের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তিনি হানিফকে জানান। সেই সম্পর্কে ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর সেলিমকে তিনি নতুন প্রেমিকের কথা বলেন। আর বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে মায়ের ঠিক করা পাত্রীকে বিয়ে করার পরামর্শ দেন নুরিদাইয়াতি। পরে ২৩ ডিসেম্বর টেলিফোনে সেলিমের সঙ্গে সম্পর্ক চ্ছিণ্ন করার কথা জানিয়ে দেন নুরিদাইয়াতি।
এর সাত দিনের পরে সেলিম আহমেদ তার সাথে আবার দেখা করতে ওই তরুণীকে রাজি করান এবং তারা একটি হোটেলে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন।
এর আগে ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর হ্য হ্যাং চুন আদালতকে বলেন যে, হানিফের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ না করলে ওই তরুণীকে বারবার হত্যার হুমকি দিতেন সেলিম।
তিনি আরও জানান, ওই তরুণী তার কথা না মানলে অভিযুক্ত সেলিম তাকে গলায় তোয়ালে দিয়ে নির্মমভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ