আগামী বাংলাদেশের জন্য নতুন সংবিধান না, নতুন গঠনতন্ত্রের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
তিনি বলেছেন, আপনারা অনেকেই বলছেন বিপ্লব, তবে এটা কিন্তু বিপ্লব না এটা গণঅভ্যুত্থান। ফলে এখনকার যে লড়াই হবে সাংস্কৃতিক লড়াই। যেটা অপূর্ণ যা আমরা করতে পারিনি সেটাকে সম্পূর্ণ করার লড়াই। আর এ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদেরকে আগামী বৃহত্তর লড়াইয়ের জন্য তৈরি হতে হবে। আর এ বৃহত্তর লড়াইটা হবে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা। ছাত্ররা কিন্তু প্রথম থেকেই বলছে বাংলাদেশের জন্য নতুন গঠনতন্ত্র প্রয়োজন, নতুন সংবিধান বা আইন না।
আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, গঠনতন্ত্র মানে কিন্তু আইন না, তবে সংবিধান মানে হচ্ছে আইন। আর আমরা কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসক না। ইংরেজরা আইন প্রণয়ন করে আর জনগণ গঠনতন্ত্র করে। আর এ পার্থক্যটাই মনে রাখতে হবে। তার মানে আপনি যখনই সংবিধান বলবেন আপনি ঔপনিবেশিক একজন শাসক। তখন আপনি লুটেরা মাফিয়াতন্ত্রের ন্যায় একজন শাসক। আপনি একটা আইন দিয়ে গরিবদের শাসন করবেন।
তিনি বলেন, আর গঠনতন্ত্র মানে জনগণ নিজেরাই অংশগ্রহণ করবে। তারা পরস্পরের সঙ্গে কীভাবে বাস করবে এটা তারা তৈরি করে। আর এখানে তারা সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেয় এবং সেখান থেকে শিক্ষা নেয়, কোনটাকে বর্জন করবে কোনটাকে রাখবে। আর এটাকেই এ সরকার দুটি বিষয় করে দেখিয়ে দিয়েছে। একটি হচ্ছে চৈত্র সংক্রান্তি এবং অপরটি হচ্ছে নববর্ষ।
তিনি বলেন, নববর্ষের পরে আমি অনেক পত্রিকা দেখেছি, অধিকাংশ পত্রিকা বুঝতে পারেনি এ সরকার এ দুইটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে জনগণকে কী বার্তা দিতে চাচ্ছে।
ফরহাদ মজহার বলেন, এখন বলা যায় যে, চৈত্র সংক্রান্তি এটা আসলে কেন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চৈত্র সংক্রান্তি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। আমাদের কৃষকরা সংক্রান্তি করে। বৈশাখ মাস যখন আসে তখন চৈত্র যে নক্ষত্র এবং গ্রহের যে নক্ষত্র তার সঙ্গে তাদের (কৃষকদের) জীবনটা যুক্ত। ফলে সৌরমণ্ডলের ওই রাশিটা চলে যায় এবং মেষ রাশিতে প্রবেশ করে। এ যে পরিবর্তনটা এটার সঙ্গে ঋতুর পরিবর্তন হয়। আর এ ঋতুর পরিবর্তনটা তারা (কৃষকরা) উৎসব করে পালন করে।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতিতে কোনো ক্যালেন্ডার নেই। আমাদের সংস্কৃতিতে ঋতু আছে। ঋতু কিন্তু বারবার ফিরে ফিরে আসে। আর আপনি যখন বৈশাখ করে বলেন, সমস্ত অতীতের ময়লা ধুয়ে যাক মুছে যাক। তখন কিন্তু আপনি আপনার ঐতিহ্যকে অস্বীকার করছেন। আপনার ট্রেডিশনকে অস্বীকার করছেন। আপনার ধর্মকে অস্বীকার করছেন। ফলে পুরোনো বলে কিছু নেই। এগুলো আমরা কলোনিয়াল যুগ থেকে শিখেছি যে পুরোনো মানে আবর্জনা এগুলোকে ফেলে দিতে হবে।
ফরহাদ মজহার বলেন, ফলে এ সংক্রান্তি করার মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন যে সংস্কৃতির উদ্বোধন করেছি তার মানে হচ্ছে, আমরা নতুনভাবে নিজেদের জানার চেষ্টা করছি। বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে ওঠা যে বিনোদন সংস্কৃতি, এটাকে আমরা সংস্কৃতি বলি না।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ