সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের চাপিয়ে দেওয়া ৪৩৯ রানের বোঝা সামলে উঠতে পারলো না স্বাগতিক ভারত। ২১৪ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়ে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ খোয়াল তারা।
মাত্র ৪৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ভারতের স্বপ্নটা তখন অনেকটাই ঝাপসা। তখনই স্বাগতিকদের স্বপ্নটা কিছুটা হলেও ফিরিয়ে এনেছিলেন রাহানে-ধাওয়ান। দু'জন মিলে ১১২ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু বিধি বাম। টার্গেটটা যে হিমালয়সম। তাই আজাঙ্কে রাহানের (৬০) ও শেখর ধাওয়ানের (৮৭) কোন কাজেই লাগলো না।
দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার রাবাদার বোলিংয়ে হাশিম আমলাকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন শেখর ধাওয়ান (৮৭)। ধাওয়ানকে বিদায় করে রাবাদা দ্রুত সুরেশ রায়নাকেও বিদায় করেন। ৫ম ব্যাটসম্যান হিসেবে আজাঙ্কে রাহানে আউট হলে ভারতের হার শুধু অপেক্ষা হয়ে দাড়ায়।
ভারতীয় অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি প্রোটিয়া লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে ২৭ রানে আউট হন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে রাবাদা সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া ডেইল স্টেইন ৩টি এবং ইমরান তাহির ২টি উইকেট নিয়েছেন।
রবিবার সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছিল এই ২ দল। সিরিজে ২-২ সমতা নিয়ে টস করতে নেমেছিলেন ভারতের অধিনায়ক ধোনি ও দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। ভাগ্য দেবীর বর পেয়েছেন ভিলিয়ার্স। টস জিতে তিনি বেছে নেন ব্যাটিং। এরপর মুম্বাই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে চলে প্রোটিয়া তাণ্ডব। ঝড় ওঠে ব্যাটে। মাটি ছেড়ে বল শুধু ছুটতে থাকে আকাশ পথে।
ভারতীয় বোলারদের নিয়ে ছেলে খেলায় মেতে উঠেছেন ভিলিয়ার্সরা। আর তাদের নির্দয় ব্যাটিংয়ে দিশেহারা হয়ে ছটফট করতে হয়েছে ধোনিবাহিনীকে।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ওপেনার হাশিম আমলার উইকেট হারাতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে; দলীয় ৩৩ রানে। তাকে আউট করে ম্যাচে ওই একবারই উল্লাসে মেতে উঠার সুযোগ পেয়েছে ভারতের বোলার ও ফিল্ডাররা। বাকিটা সময় উল্লাস করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা।
ওপেনার কুইন্টন ডি কক, টু ডাউনে নামা ফাফ ডু প্লেসিস আর ডি ভিলিয়ার্স তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো দলের এক ইনিংসে ৩ ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি করার দ্বিতীয় ঘটনা এটি। আগের রেকর্ডটিও দক্ষিণ আফ্রিকার। চলতি বছর জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ ব্যাটসম্যান।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রথম সেঞ্চুরিটি ডি ককের। ৮৭ বলে ৭ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় তিনি করেছেন ১০৯ রান। তিনি আউট হওয়ার পর জুটি বেঁধেছেন ডু প্লেসিস ও ভিলিয়ার্স। আর ভারতের বোলার ও ফিল্ডারের সত্যিকারের বিপদ শুরু হয় তখনই। এই দুই ব্যাটসম্যানের তাণ্ডবে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ফুলে ফেঁপে উঠেছে বিদ্যুৎ গতিতে।
১১৫ বলে ৯ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কায় ১৩৩ রান করার পর পায়ের ইনজুরিতে মাঠ ছাড়েন প্লেসিস। আর ভিলিয়ার্স আউট হওয়ার আগে ৬১ বলে ১১৯ রান করেছেন ৩ বাউন্ডারি ও ১১ ছক্কায়। আর তাতেই নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৩৮ রানের পাহাড় দাঁড় করিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংসের ক্ষেত্রে এটি চতুর্থ সেরা। প্রথমটি শ্রীলঙ্কার দখলে; ৪৪৩/৯, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। পরের ৩টি রেকর্ডই দক্ষিণ আফ্রিকার; ৪৩৯/২, ৪৩৮/৯ (৪৯.৫ ওভারে) এবং ৪৩৮/৪।
অন্যদিকে ওয়ানডেতে ভারতের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ৩৬২ রানের। ২০১৩ সালের ১৬ অক্টোবর জয়পুরে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৬০ রানের টার্গেটে ৩৬২ রান তুলে ৯ উইকেটের জয় পেয়েছিল ভারত।
বিডি-প্রতিদিন/২৬ অক্টোবর ২০১৫/ এস আহমেদ