''করোনা ভাইরাস সংক্রমণে জ্বর, কাশি, দুর্বলতা এবং ফুসফুসের ওপর গুরুতর আক্রমণের ফলে শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে বাতাসের অভাববোধ তৈরি হয়। পুরোপুরি সুস্থ হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ বেড রেস্ট নিতে হয়। কম চলাফেরা এবং ফুসফুসের উপর চাপের কারণে শরীর স্বাভাবিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই পরিস্থিতিতে শারীরিক সক্ষমতা দ্রুত ফিরে পেতে ফিজিক্যাল থেরাপি বিশেষ ভাবে কার্যকরী হতে পারে। ফিজিক্যাল থেরাপি বা ফিজিওথেরাপি, যেমন অসুস্থতা, দুর্বলতা, বিকলঙ্গতা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হতে পারে, তেমনি যে কোনো স্বাভাবিক সুস্থ মানুষও ফিজিক্যাল থেরাপি ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে নিজের শারীরিক সক্ষমতাকে আরো বৃদ্ধি করতে পারেন।''
‘করোনাকালে ফিজিওথেরাপি’ শিরোনামে ২২ আগস্ট ২০২০ ঢাকায় আমেরিকান পদ্ধতিতে পরিচালিত ফিজিওথেরাপি সেন্টার ‘ব্যাক ইন মোশন’ আয়োজিত বিশেষ সেমিনারে কথাগুলো বলেন আমেরিকা থেকে আসা ডক্টরেট ইন ফিজিকাল থেরাপি ও ব্যাক ইন মোশনের চেয়ারম্যান ড. তাজিয়া সরদার।
তিনি আরো বলেন,“করোনা আমাদের এটা বুঝিয়ে গেছে যে, রোগ প্রতিরোধে আমাদের নিজেদের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার কোনো বিকল্প নেই; নিজেকে ফিট রাখা, মনকে প্রশান্ত রাখা, ইমিউন সিস্টেমকে সদা সক্ষম রাখার কোনো বিকল্প নেই; আর ফিজিক্যাল থেরাপি সেই কাজটিই সুন্দরভাবে করতে আমাদের সহায়তা করে।”
ব্যাক ইন মোশন ফিজিওথেরাপি সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. তাজিয়া সরদার বলেন, ব্যাক ইন মোশন ঢাকায় স্থাপিত সম্পূর্ণ আমেরিকান পদ্ধতিতে পরিচালিত ফিজিওথেরাপি ক্লিনিক। বাংলাদেশে ভালো ফিজিওথেরাপি সেন্টারের অভাব রয়েছে এমন চিন্তা থেকেই এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানে প্রতি রোগীর জন্য থাকছে সম্পূর্ণ কাস্টমাইজড বা ব্যক্তিগত চিকিৎসা পদ্ধতি। প্রত্যেক রোগীকে আলাদাভাবে রোগের ইতিহাস ও সমস্যার বিবরণ শুনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। দক্ষ ও অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের ধারাবাহিক ও সর্বোচ্চ দক্ষতার প্রয়োগ রোগীকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সাহায্য করে। এখানে রোগ নির্ণয়ের পর আধুনিক আমেরিকান পদ্ধতিতে ম্যানুয়াল থেরাপি প্রয়োগ করে পেশীর সম্প্রসারণ, স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। রোগ নিরাময়ের জন্য কিনিজিও ট্যাপিং, ইয়োগা, পিলাটিস পদ্ধতিও প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা হয়। আধুনিক ও সর্বশেষ টেকনোলজির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে এখানে।
সেবা গ্রহণকারীদের ইলেকট্রো থেরাপি, লেজার থেরাপি, আলট্রাসাউন্ড, ইএমজি এবং শারীরিক অবস্থা ও ওজনের ওপর ভিত্তি করে ট্রেডমিল প্রশিক্ষণ এবং নিওরোলজিকাল বা স্নায়ুরোগে ভোগা রোগীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। স্পোর্টস ইনজুরি, তীব্র ব্যথা , দীর্ঘদিনের পুরানো ব্যথা, কাঁধ ব্যথা, কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, গোড়ালি ব্যথা, পিঠ ব্যথা , কনুই ব্যথা, মেরুদণ্ডে আঘাত সহ স্ট্রোক পরবর্তী স্বাস্থ্য সেবা, কার্ডিয়াক বা হৃদরোগ পুর্নবাসন কর্মসূচি, নিউরো বা স্নায়ুরোগ পুর্নবাসন কর্মসূচি ,পেইন ম্যানেজমেন্ট, টোটাল জয়েন্ট রিপ্লেসম্যান্ট বা প্রতিস্থাপন ও অপারেশন পরবর্তী সেবা, অর্থপেডিক এবং হাঁড় ও পেশীর সমন্বিত চিকিৎসা এখানে দেওয়া হয়।
ড. তাজিয়া সরদার নিউ ইয়র্কের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি থেকে ফিজিক্যাল থেরাপির ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এর আগে একই ইউনিভার্সিটির হেলথ সায়েন্স বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে তিনি হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট বা স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাপনা নিয়ে অধ্যয়ন করেন। করোনাকালে কীভাবে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা যায় এ বিষয়ে পরবর্তীতে তিনি কয়েকজনের প্রশ্নের উত্তর দেন।