এবারই প্রথম নয়, বিএনপি-জামায়াত প্রত্যেকে আলাদা এবং যৌথভাবেও কিছু নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। যা প্রথমত আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর, দ্বিতীয়ত আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তিকে হেয় করে এবং তৃতীয়ত প্রতারণামূলক।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ওয়াশিংটন ডিসি, লন্ডনসহ বিভিন্ন শহর এবং অন্যান্য দেশে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক প্রপাগান্ডা চালানো, বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী কাজের জন্য লবিস্ট ভাড়া এবং পাবলিক রিলেশন এজেন্সি নিয়োগ করেছিল। এখনো তাদের সেসব কার্যক্রমের অনেক কিছুই অব্যাহত। প্রামাণ্য নথিতে রয়েছে কীভাবে যু্দ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর ক্যাসিডি এবং অন্যান্য লবিস্ট সংস্থাকে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে মীর কাসেম আলী ভাড়া করেছিলেন।
এই লবিস্ট সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক চিত্র প্রদর্শনে ভূমিকা রাখছে এখনো। তারা আমাদের সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী প্রচার থেকে শুরু করে তৈরি পোশাক বিদেশে প্রবেশাধিকারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি এবং বড় বড় প্রকল্পের জন্য বহুজাতিক সংস্থাগুলোর ঋণদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে।
এখানে আমি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য উল্লেখ করতে চাই। যখন আওয়ামী লীগ ১৯৯৬-২০০১ ক্ষমতায় ছিল, আমাদের সরকারও ওয়াশিংটন ডিসিতে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল। কিন্তু আপনারা জানেন, তা কেন? তারা লবিস্ট ভাড়া করেছিল বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ জোন অথরিটি (বেপজা) এবং বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন (বিজিএমইএ)-এর জন্য, যেন বাংলাদেশের পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায় এবং শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হয়। বাস্তবতা এই, বিএনপি-জামায়াতের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী এবং সাবেক মুখ্য সচিব ড. সামাদের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের স্বার্থে লবিস্ট সংস্থা নিয়োগের কারণে মামলা করেছিল। হাস্যকর বিষয় হলো, বিএনপি-জামায়াতও লবিস্ট সংস্থা ভাড়া করে কিন্তু সেটা দেশের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য নয়, জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে, দেশের স্বার্থ ধ্বংসের লক্ষ্যে।
আমি তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের একটি উদাহরণ দিচ্ছি। বিএনপি চেয়ারপারসন (এবং তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া) ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি, ওয়াশিংটন ডিসিতে তার নিজের নামে ওয়াশিংটন টাইমস নামের একটি পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এই নিবন্ধটিতে, বিএনপি চেয়ারপারসন প্রকাশ্যে এবং স্পষ্টভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন এই বলে যে, কেন যুক্তরাষ্ট্র 'নিষ্ক্রিয় দাঁড়িয়ে' আছে। এই নিবন্ধে বেগম জিয়া, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক তাদের তহবিল প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন (এই প্রকল্প আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং আমাদের দরিদ্র মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষার একটি প্রকল্প), যুদ্ধাপরাধীদের ও তাদের সমর্থকদের প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছেন, সমর্থন জানিয়েছেন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নিতে। শুধু তাই নয়, তিনি একই সঙ্গে পরামর্শ ও জোর দিয়ে বাংলাদেশ সরকার, এই খাতে নেতৃস্থানীয় যারা তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য বলেছেন।
এমনকি এ ক্ষেত্রে বিএনপি মিথ্যা বলেছিল যে, বেগম জিয়া নিবন্ধটি লিখেননি কিন্তু বাস্তবতা হলো ওয়াশিংটন টাইমস গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে নিশ্চিত করেছে এটা অবশ্যই বিএনপি চেয়ারপারসনেরই লেখা। আমি বলতে চাই, এটা সম্ভবত পৃথিবীতে একমাত্র ঘটনা যে, একটি দেশের রাজনৈতিক দলের নেতা প্রকাশ্যে সেই দেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল এবং নিজ দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলতে পারেন। এটা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করার বিষয় যে, কোনো ব্যক্তি বা দলের (বিশেষ করে সেই দল যারা দুর্নীতিবাজ নেতা ও যু্দ্ধাপরাধীদের রক্ষা করে) স্বার্থ আমাদের দেশ, জাতি এবং অবশ্যই দেশের দরিদ্র মানুষের চেয়ে বড় নয়। কারা জিএসপি ব্যবহারের সুবিধা পেত? তৈরি পোশাক খাত আমাদের সবচেয়ে বড় কর্মসংস্থানকারী, যারা রপ্তানি আয় এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধমে দরিদ্র জনগণকে সহায়তা করে। কীভাবে একটি রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে আমাদের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে পারে? ভাবলে অবাক হতে হয়!
সবচেয়ে হাস্যকর বিষয়, বিএনপি-জামায়াত পুনরায় আওয়ামী লীগকে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে দোষারোপ করছে। অথচ সত্য এটাই যে, আওয়ামী লীগ ভারতসহ সব দেশের সঙ্গে তার আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী কাজে তাদের সব প্রচারণা এবং পরামর্শকদের ব্যবহার করে।
যেখানে আওয়ামী লীগ আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে জাতির গর্ব এবং সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলাকে বিশ্বাস করে, সেখানে বিএনপি-জামায়াত ঠিক তার উল্টা। আওয়ামী লীগ নয়, বরং আবারও বিএনপি-জামায়াত ভারতসহ অন্যান্য দেশকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে বলেছে। জানুয়ারির ৭ তারিখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ইন্ডিয়া টাইমসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে বলেছেন। কি লজ্জা! অথচ এই দল এবং দলের নেতারা জাতীয় সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার দাবি করে! একই সময়ে, বিএনপি আন্তর্জাতিক বিশ্বে খুবই দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকা রেখেছে, যা পুরো দেশকে অপদস্থ করেছে। আমরা সবাই জানি, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের বন্ধু। যখন তিনি বাংলাদেশ সফরে এলেন তখন জামায়াত ৪ মার্চ-২০১৩ যু্দ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকল। বিএনপি স্পষ্ট ওই যুদ্ধাপরাধীদের হরতালে সমর্থন দিল, যা বোঝা যায় হঠাৎ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়ার নির্ধারিত বৈঠকটি বাতিল করার জন্য যেখানে হরতাল ডেকেছে তাদেরই জোটের শরিক দল। এতে প্রতীয়মান হয়, বিএনপি জামায়াত দ্বারা পরিচালিত। একই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে মে-২০১৩ যখন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যান বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের সময় বিএনপি হরতাল ডাকল এবং কার্যত ওয়েন্ডি শেরম্যান বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার বৈঠকটি বাতিল করার মাধ্যমে তাদের একটি স্পষ্ট বার্তা দিল।
এই দুই ঘটনা থেকে আমরা কী উপসংহারে পেঁৗছতে পারি? বিএনপি-জামায়াত তখন হরতাল ডাকে যখন বিদেশি কেউ বাংলাদেশ সফরে আসেন। যখন বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরা প্রয়োজন, তারা হরতাল ডাকে এবং আমাদের অতিথিদের তোপের মুখে ফেলে জাতিকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে ফেলে। যাই হোক, যে কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড যেমন বাংলাদেশ বিষয়ে মিথ্যা নিবন্ধ প্রকাশ, বাংলাদেশবিরোধী লবিস্ট নিয়োগ- এসব কাজে তারা সব সময়ই অতি উৎসাহী।
আমরা মনে করি বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ আমাদের জাতির জন্য মর্যাদাহানিকর এবং বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর, সম্ভবত সময় এসেছে আমাদের বিষয়টি নিয়ে ভাবার যে, 'জাতীয়তাবাদী' নামে থাকলেই তাদের দেশপ্রেমিক বা জাতীয়তাবাদ করে না। বিএনপি আমাদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, স্বার্থবিরোধী কাজ করছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছোট করছে।
অতি সম্প্রতি তিনটি ঘটনা ঘটেছে। আমি নিশ্চিত যে, আপনারা সবাই দেখেছেন বিএনপির এক কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে চেয়েছে। এটা প্রকাশ্যে এসেছে এবং ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বিবৃতি প্রদান করেছে এবং তদন্ত শেষে বিচারকার্য শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত তার অপরাধের স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি দুটি কাজ করতে চেয়েছে : ১. আওয়ামী লীগের একজন রাজনৈতিক নেতার ওপর মনগড়া তথ্যের সন্ধান করেছে এবং ২. যে বিষয়টি আমাদের ভুললে চলবে না, এটা স্পষ্টভাবে ডিওজে বিবৃতিতে উল্লেখ আছে যে, রিজভী আহমেদ সিজার যার বাবা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির জাসাস নেতা সে, এটি ছাড়াও 'ভিন্ন একজন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে থাকা অপরাধের অভিযোগগুলো খারিজ করাতে চেয়েছিল', তিনি আর কেউ নন, সেই রাজনীতিক তারেক রহমান।
একই ঘটনা বিএনপি আবারও ঘটায় যখন মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের ভুয়া সইয়ে জাল বিবৃতি প্রকাশ করে। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা এই প্রতারণাপূর্ণ কাজের নিন্দা জানিয়েছেন। দুঃখজনকভাবে এ খবরটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির বিশেষ দূত সাদী এই জালিয়াতিতে জড়িত এবং যার ফলে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে 'স্বাক্ষর জালিয়াত' হিসেবে পরিচিত হচ্ছি। একইভাবে তারা দাবি করেছিল বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ তাদের ফোন করেছিল কিন্তু পরে অমিত শাহর পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয় যে, দাবিটি মিথ্যা। আসলে বিএনপি অব্যাহতভাবে আমাদের দেশের মর্যাদাহানি হয় এমনভাবে মিথ্যাচার করেই চলেছে। এটা আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য চূড়ান্ত অসম্মানজনক।
বিএনপির এই একই সংস্কৃতি আমরা দেখেছি যখন তারা দেশে এবং বিদেশে আমাদের আন্তর্জাতিক মহলের বন্ধুদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিয়ে আসতে চায়। তারা প্রতিনিয়ত হেরিটেজ রেস্টুরেন্টে মিটিং আয়োজন করে যেখানে তারা চেষ্টা করে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রপাগান্ডা ছড়াতে। আমার কোনো সমস্যা নেই যদি বিএনপি কূটনীতিকদের সঙ্গে বসে, যদি তারা কূটনীতিকদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক রাখে এবং আমাদের দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে, কিন্তু বাস্তবতা হলো বিএনপি করে ঠিক তার উল্টাটি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে আমরা কি দেখি কংগ্রেস এখন বিজেপি এবং ভারতকে কটাক্ষ করছে শুধু তারা ক্ষমতায় নেই সে জন্য? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা, ঐকমত্যের ওপর ভিত্তি করে তারা তাদের জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে, যেখানে বিএনপি সম্পূর্ণ বিপরীত। এতে দেখা যায়, আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি বিএনপি সম্মান দেখায় না এবং তা ওদের হাতে নিরাপদও নয়।
বিএনপি এবং জামায়াত অব্যাহতভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যাচার করে চলেছে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, তারা হেফাজতের র্যালিতে 'আলেমদের গণহত্যা'র দাবি করে যেখানে হেফাজত নিজেও আগের দাবি থেকে সরে এসেছে এবং স্বাধীন তদন্তে বের হয়েছে যে, রাতের অভিযানের সময় একজনও মারা যায়নি। এরপরও তারেক এবং তাদের অন্যরা দাবি করে আসছে হাজার হাজার মানুষ মরেছে।
আরেকটি বিষয়, বিএনপি লন্ডনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর গাড়িতে ডিম ছুড়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চেয়েছে। এর নাম কী গণতন্ত্র? এই কী দেশপ্রেম? আমরা কি এমনই এক বাংলাদেশের চিত্র আন্তর্জাতিকভাবে চাই? পক্ষান্তরে, যখন প্রধানমন্ত্রী কানাডায় তার হোটেলের বাইরে বিক্ষোভকারীদের দেখলেন, তিনি তাদের তার সঙ্গে কফি খেতে দাওয়াত করলেন এবং তাদের বিক্ষোভের কারণ জানতে চাইলেন। এই হলো আওয়ামী লীগ আর বিএনপি-জামায়াতের পার্থক্য, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেগম জিয়ার পার্থক্য।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন।