স্বতন্ত্র পরিচিতি বজায় রাখার জন্য প্রত্যেকটি সামরিক অপারেশনের একেকটি আলাদা সাংকেতিক নাম থাকে। যেমন- ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চ লাইট বা ২০০২ সালে জামায়াত-বিএনপি সরকারের অপারেশন ক্লিনহার্ট ইত্যাদি। বেশির ভাগ সময়ে বাস্তব ক্ষেত্রে নামের সঙ্গে কাজের কোনো মিল থাকে না। ছদ্মবেশ বা ছদ্মাবরণ সৃষ্টি করার জন্য নাম নির্ধারণ করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুদ্ধরত পক্ষদ্বয় বা পক্ষগুলোর বাইরে থাকা জনমানুষ, বিশ্ব সমাজ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বিভ্রান্ত করা এবং ধোঁকা দেওয়ার অভিপ্রায়ে অথবা নিজেদের কার্যকলাপের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য ভালো ভালো নাম দেওয়া হয়। যেমন- সার্চলাইট কথাটির বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় আলোর সন্ধানে। চমৎকার নাম। কিন্তু ৯ মাস বাংলাদেশে আলোর সন্ধানের নামে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে অন্ধকার জগতে প্রবেশ করেছিল তাতে একাত্তরে পাকিস্তান তো দুই টুকরা হয়েছেই, অধিকন্তু আজ পর্যন্ত সেই অন্ধকার গুহা থেকে পাকিস্তান বের হতে পারেনি। বরং দিন দিন আরও অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। জানুয়ারির ৫ তারিখ থেকে জামায়াত-বিএনপি জোট যা করছে তারা সেটির নাম দিয়েছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র উদ্ধার। কিন্তু আসলে কি তাই? নাকি এটি তাদের চলমান অপারেশনের একটি সাংকেতিক বা ছদ্মনাম? এই প্রশ্নের উত্তর প্রসঙ্গে আলোচনা করাই আজকের নিবন্ধের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তার আগে গণতন্ত্রের বাস্তব চেহারা এখন বিশ্বব্যাপী কেমন, সে সম্পর্কে ২০১০ সালে 'দ্য ইকোনোমিস্ট' পত্রিকার ইন্টেলিজেন্স শাখা কর্তৃক পরিচালিত একটি সার্ভে রিপোর্টের কথা উল্লেখ করতে চাই। ওই সার্ভেতে যে উপাদানগুলো বিবেচনা করা হয় তা হলো- নির্বাচনী প্রক্রিয়া, বহুত্ববাদ, জনগণের স্বাধীনতা, সরকারের কর্মপদ্ধতি এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পূর্ণ গণতন্ত্র আছে বিশ্বের মাত্র ২৬টি দেশে। নরওয়ে শীর্ষে। সেখানে আমেরিকা ও ব্রিটেনের নাম থাকলেও গুণগত মান নেমে গেছে বলে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। ৫৩টি ত্রুটিযুক্ত গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে ভারতের নামও আছে। বাকি গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে শঙ্কর জাতীয় গণতান্ত্রিক অভিধায়, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত। তবে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- বহু উন্নয়নশীল দেশ গণতন্ত্রের সূচকে পিছিয়ে পড়লেও বাংলাদেশ এ সময়ে ৮ ধাপ এগিয়ে ৮৩তম স্থানে আছে। এ রিপোর্টের কথাটি এখানে উল্লেখ করছি এ কারণে যে, গণতন্ত্রের মাপকাঠিতে বাংলাদেশে এখনো অনেক ঘাটতি আছে, যা ১৯৭৫ সালের পর দীর্ঘ সামরিক শাসনের ধারাবাহিকতায় চলে আসছে, কোনো একটি সরকার বা একটি মাত্র নির্বাচন এর জন্য দায়ী নয়। একনাগাড়ে ১৫ বছর পর পর দুজন সামরিক শাসক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সব কিছু এমন লণ্ডভণ্ড করেছে যে, সেখান থেকে আর বের হওয়া যাচ্ছে না।
দশম সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের এক বছরের পুরোটা সময় যে রাষ্ট্রীয় পরিবেশ বজায় ছিল তার সঙ্গে যদি ১৯৯১ থেকে ২০১৩, এই ২২ বছরের বিরাজমান পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে যারা এখন নিরীহ মানুষ হত্যা করছে তারা কি সুনির্দিষ্টভাবে কোনো গণতান্ত্রিক উপাদানের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, ওই ২২ বছর এই এই উপাদান বিদ্যমান ছিল যেগুলো ২০১৪ সালে ছিল না। এমন তুলনামূলক মূল্যায়ন কেউ প্রকাশ করেছেন বলে দেখিনিই। সেটি কেউ করতে চাইলে উপরে উলি্লখিত দ্য ইকোনোমিস্টের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের কথা খেয়াল রাখলে বাস্তবতা বুঝতে পারবেন। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন প্রভৃতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য গণতন্ত্র উদ্ধারকারীদের মুখে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য দেখিনি। তাদের সব কথা শুধু একটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, যে নির্বাচন সংবিধান ও আইনগতভাবে সম্পূর্ণ বৈধ এবং ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট ও সরকার বিশ্ব সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। জনমানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন যদি গণতন্ত্রের লক্ষ্য হয় তাহলে ২০১৪ সালে তো সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়েছে। গত এক বছর ব্যবসা-বাণিজ্য, লেখাপড়া, চলফেরা, কাজকর্ম সবকিছুই মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে করেছে। নির্বাচনের পর গত এক বছরে জনজীবনে কোনো বিপর্যয় বা দুর্যোগ সৃষ্টি হয়নি। তাহলে এখনই এই সরকারের পতন বা দ্রুত সময়ের মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের নামে এ নৈরাজ্য এবং হত্যাযজ্ঞ কেন? ভোট প্রদানের হার কম হয়েছে বা ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তার জন্যই কি নতুন নির্বাচনের দাবিতে এই তাণ্ডব? বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজন নির্বাচিত হওয়া আর শতাধিক নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে আইনের দৃষ্টিতে কোনো পার্থক্য আছে কি? নৈতিকতার কথা বলবেন। এক্ষেত্রে নৈতিকতার সীমানা কোথায়? সেই সীমানা কে নির্ধারণ করবে? কেউ একজন সীমানা নির্ধারণ করে দিলে সবাই কি তা মানবেন। একটি নির্দিষ্ট দল যখন বলে তাদের সব দাবি-দাওয়া ও ইচ্ছামতো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সাজাতে হবে, তাহলেই কেবল তারা নির্বাচনে যাবে, নইলে যাবে না। সব দলই যদি একই অবস্থান গ্রহণ করে তাহলে সেটির শেষ কোথায়? ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি কি সে রকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি? এখন যদি আরেকটি নতুন নির্বাচন হয়, তাতে যে দলেরই সরকার নতুন করে আসুক তাতে বিরাজমান গণতন্ত্রের কী উন্নতি ঘটবে অথবা মানুষের কী লাভ হবে? নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো যথাযথভাবে বাতিল হয়েছে। বাতিল প্রক্রিয়ায় কোনো নিয়ম ও আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। নিরপেক্ষ সরকারের প্রধান কে হবে তা ঠিক করা এবং পুরো সরকার গঠন করা নিয়ে যে কী লঙ্কাকাণ্ড ঘটতে পারে সেটি তো ২০০৬ সালে এ দেশের মানুষ দেখেছে। যার জের ধরে দুই বছর জরুরি আইন বহাল থেকেছে এবং সমগ্র দেশ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে এবং ভোটের দিনে বিএনপি-জামায়াত প্রতিহতের নামে যে অগি্নযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাতে কি বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক অধিকার জোরপূর্বক হরণ করা হয়নি? আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাচন বর্জন করবেন, সেটা ঠিক আছে। কেউ আপনার ওপর জোরজবরদস্তি করছে না। কিন্তু আরেকজন আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ভোট দিতে যাবে, তাকে আপনি পুড়িয়ে মারবেন, হত্যা করবেন, এটা কি গণতন্ত্রের কথা? তার পরেও আপনি বলবেন মানুষ ভোট দিতে যায়নি। কেউ দ্বিমত পোষণ করলে জোর করতে হবে! এটাই কি গণতন্ত্র উদ্ধারের উদাহরণ?
এখন গণতন্ত্র উদ্ধার অপারেশনের কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক। কলামের সীমাবদ্ধতার কারণে বেশি পিছনের দিকে যাব না। অনেকের ভাষায় বিএনপি-জামায়াত জোট এখন গণতন্ত্র উদ্ধার অপারেশনে লিপ্ত। তাই বিএনপি নেতারা বলছেন, কীসের পরীক্ষা, কীসের লেখাপড়া, এটা কোনো বিষয় নয়। ১৫ লাখ ছাত্রছাত্রী, তাদের অভিভাবক শিক্ষকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তাদের কাছে গৌণ বিষয়। ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপির শাসনামলে যে রকম গণতন্ত্র ছিল সেটা ফিরে এলেই বাংলাদেশের সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। যুদ্ধাপরাধী নিজামী-মুজাহিদ খালাস পেয়ে আবার মন্ত্রী হলে দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে! বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থী জামায়াতের প্রেসক্রিপশন প্রদত্ত শিক্ষানীতির আলোকে আলোকিত হয়ে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় আত্দনিয়োগ করবে। এর থেকে তো ভালো কিছু আর হতে পারে না! তাই নিরীহ অসহায় এতিম মানুষকে পুড়িয়ে মারাকে বিএনপির নেতারা বলছেন কোল্যাটার্যাল ড্যামেজ বা পারিপার্শ্বিক ক্ষতি। কিন্তু তারা ভালো করে জানেন সাধারণ, মানুষকে টার্গেট করে সরাসরি আক্রমণকে পারিপার্শ্বিক ক্ষতি বলা হয় না। এটা একটি সামরিক টার্ম এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য এর একটি সংজ্ঞা আছে। দুই পক্ষ যখন যুদ্ধে লিপ্ত হয় তখন জেনেভা কনভেনশন বা নিয়মনীতি মেনে যুদ্ধরত অবস্থায় আকস্মিক কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য বেসামরিক জনগণ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটাকেই কোল্যাটার্যাল ড্যামেজ বা পারিপার্শ্বিক ক্ষতি বলা হয়। নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষকে সরাসরি আক্রমণ করা মানবতাবিরোধী অপরাধ। বিএনপির প্রভাবশালী শরিক জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের আদর্শ মতে গণতন্ত্র হলো কুফরি মতবাদ এবং হারাম। এ জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি কী ধরনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে? ২০০৮ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে বেগম খালেদা জিয়া যখন বিএনপির নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াত নেতা মুজাহিদের সঙ্গে দীর্ঘ শলাপরামর্শ করেন তখন বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর জামায়াতের প্রভাব কতখানি তার নমুনা পাওয়া যায়। জামায়াত যদি শুধু নির্বাচনী জোট হয়ে থাকে, তাহলে ২০০১ সালে বিএনপি একা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরেও জামায়াতকে মন্ত্রিসভায় নিল কেন? মুজাহিদ সংসদ সদস্য না হয়েও টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী। একেই বলে নির্বাচনী জোট। অন্য শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের স্লোগান হলো- 'আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান'। এ অবস্থায় গণতন্ত্র কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের কথা বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভুলবে না। কারণ বাংলাদেশের সব অর্জন সেদিন ধূলিসাৎ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সেদিন বিএনপির সিনিয়র নেতারা হেফাজতের মঞ্চে উঠে ১৩ দফার সঙ্গে একাত্দতা প্রকাশ করে। হেফাজতের এই ১৩ দফার মাধ্যমে বিএনপি কোন ধরনের গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায় তার কি কোনো ব্যাখ্যা আছে? তারপর হেফাজতের লাঠিয়াল বাহিনী মতিঝিল, পল্টন এলাকাকে রণক্ষেত্র বানিয়ে দোকানপাট, দালানকোঠা এবং পবিত্র কোরআন শরিফে আগুন লাগিয়ে যখন ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল তখন বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে হুকুম দিলেন হেফাজতের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য। এটাই কি গণতন্ত্র উদ্ধারের সঠিক পথ? ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা সাঈদীর ফাঁসির হুকুম হলে জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও এবং বিশ্রামরত পুলিশ ও নিরীহ মানুষসহ সংখ্যালঘু হত্যায় মেতে ওঠে। জামায়াতের এই তাণ্ডবে যোগ দেওয়ার জন্য ১ মার্চ বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে হুকুম দেওয়া হয়। এভাবে কি গণতন্ত্র উদ্ধার হবে? তারপর ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকায় তাদের ভাষ্যমতে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ ডেকেছিল। সেদিন কী ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা তারা করেছিল তার বিস্তারিত বিবরণ কয়েক দিন আগে ফাঁস হয়ে গেছে এবং পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলেছে, সহিংসতার পথ থেকে বিএনপিকে ফিরে আসতে হবে। বিএনপির নেতা-কর্মী ও পন্থিদের কথাবার্তায়ও এক ধরনের স্বীকারোক্তি বের হয়ে আসছে। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে বিএনপি তা স্বীকার করতে পারছে না। কারণ সংবিধিবদ্ধভাবে বিএনপি চরমপন্থি, উগ্রবাদী বিপ্লবী দল নয়। গণতন্ত্র উদ্ধার অপারেশনে ২০ দলীয় জোটের বাইরে থেকে কিছু ব্যক্তি ও খুচরা দল মিত্রপক্ষ হিসেবে বিএনপির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিকল্পধারার ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে অত্যন্ত অগণতান্ত্রিকভাবে বিএনপি একরকম ধাক্কা দিয়ে যেভাবে বঙ্গভবন থেকে বি. চৌধুরীকে বের করে দিল এবং ছাত্রদলের ক্যাডার বাহিনী তাকে যেভাবে মগবাজারের রেলক্রসিংয়ের বাঁশের নিচ দিয়ে ধাওয়া করল, তাতে কী করে আবার তিনি মনে করলেন এ যাত্রায় বিএনপি গণতন্ত্র উদ্ধার করে ছাড়বে? একজন মানুষের আত্দমর্যাদার বালাই যদি না থাকে তাহলে তার দ্বারা গণমানুষের কোনো কল্যাণ করা কি সম্ভব? এর বাইরে আরও কিছু ব্যক্তি বের হয়েছেন যারা বাহ্যিকভাবে সজ্জন মানুষ হিসেবে পরিচিত। তারাই ২০০৭-২০০৮ সালের জরুরি আইনের প্রবল সমর্থক এবং আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলকে ভেঙে ফেলার চেষ্টায় সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত ছিলেন। জরুরি আইনের প্রবল সমর্থকরা এখন গণতন্ত্র উদ্ধার অভিযানে বিএনপির ফ্ল্যাঙ্কিং ফোর্স বা পার্শ্ববাহিনী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এত মানুষ আগুনে দগ্ধ হলো, মৃত্যুবরণ করল- এত বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা করল তাদের নাম নিতে এসব সুশীল ব্যক্তি লজ্জা পান। জামায়াতের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন, এসব ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এরাই এখন গণতন্ত্র উদ্ধারের সৈনিক!
লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।