অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘গত আট মাসে আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজ করা। দেশে বিদেশি বিনিয়োগের এমন অনুকূল পরিবেশ আগে কখনো ছিল না।’
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনা বিনিয়োগকারী একটি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বিনিয়োগসংক্রান্ত সমস্যা এবং এ কাজে গতি বাড়াতে চীন ও কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি প্রাতরাশ বৈঠকের আয়োজন করবেন বলেও ঘোষণা দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার প্রবর্তিত বিনিয়োগ পরিবেশ, বাণিজ্য ও শ্রম সম্পর্কিত সংস্কার বাংলাদেশে আরও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরও উৎপাদন কারখানা দেশে স্থানান্তর সহজতর করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রতি মাসের ১০ তারিখে কোরিয়ান ও চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মাসিক প্রাতরাশ বৈঠকের আয়োজন করবেন।’ বিডার আয়োজনে এসব বৈঠক হলেও প্রধান উপদেষ্টা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন বিষয় শোনার জন্য সেগুলোর কয়েকটিতে অংশ নেবেন বলে তিনি জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি হটলাইন ও কল সেন্টার সার্ভিস স্থাপনের প্রস্তাব করেন, যাতে তাঁরা দ্রুত অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘যে কোনো বিনিয়োগকারী এ নম্বরে কল করে তাঁদের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারবেন এবং আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, পরিবহন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেক্সটাইল, মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিকস এবং আইটি পরিষেবার মতো খাতের বড় বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী কমপক্ষে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট চীনা বিনিয়োগকারী এ বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান মেইনল্যান্ড হেডগিয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট পলিন এনগান। চীনা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মোংলায় পরিকল্পিত চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল উভয় ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যেখানে চীন একটি সমুদ্রবন্দর আধুনিকায়ন করতে প্রস্তুত। বাংলাদেশকে একটি শীর্ষ বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তরের প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেশ কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশকে তাদের দক্ষিণ এশিয়ার উৎপাদন ও অপারেশন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। কিছু বৃহত্তর চীনা প্রতিষ্ঠান বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) রূপান্তর, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন, বায়ুবিদ্যুৎ এবং অফশোর ফটোভোলটাইক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বড় বিনিয়োগ করবে দক্ষিণ কোরিয়া : এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েক ডজন বিনিয়োগকারীও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া কোরিয়ান ফ্যাশন ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশের সরবরাহশৃঙ্খল অত্যন্ত দক্ষ এবং সমন্বিত। প্রতিনিধিদলে এলজিসহ কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় টেক্সটাইল, ফ্যাশন, স্পিনিং, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উদ্যোক্তারা অংশ নেন। একজন বিনিয়োগকারী এখানে একটি এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) প্লান্ট স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক কোঅর্ডিনেটর লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সরকারের বিদেশি বিনিয়োগসহায়ক নীতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।