বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, জামায়াত এখন প্রশাসন, সচিবালয়সহ সব কিছুতেই মাতব্বরি ফলাচ্ছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। এমন ধারণা হচ্ছে যে, সরকারও বোধহয় তাদের কথায় চলে। এদিকে সরকার পতনের আন্দোলনের শেষ পর্যায়ের যারা খেলোয়াড় তারা এখন রাজনৈতিক দল করছে, তাদের কথাবার্তায়ও মনে হচ্ছে জামায়াতের সঙ্গে তাদের ঐক্য আছে। তাদের পরস্পরের কথাবার্তায় মিল আছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধও রাজনীতিতে সুফল বয়ে আনবে না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন-এ পরিপ্রেক্ষিতে আপনার দলের অবস্থান কী?
গয়েশ্বর : আমরা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলিনি কত দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। একটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরিভিত্তিতে সম্পন্ন করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছি। সংস্কার কাজ পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে গেলেও নির্বাচিত সংসদ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজনীতির মাঠে বিএনপির অন্যতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত ও এনসিপির কার্যক্রমকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
গয়েশ্বর : জামায়াত এখন প্রশাসন, সচিবালয়সহ সব কিছুতেই মাতব্বরি ফলাচ্ছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। এমন ধারণা হচ্ছে যে, সরকারও বোধহয় তাদের কথায় চলে। এদিকে সরকার পতনের আন্দোলনের শেষ পর্যায়ের যারা খেলোয়াড় তারা এখন রাজনৈতিক দল করছে, তাদের কথাবার্তায়ও মনে হচ্ছে জামায়াতের সঙ্গে তাদের ঐক্য আছে। তাদের পরস্পরের কথাবার্তায় মিল আছে। অন্যদিকে কিছু ব্লগার, ইউটিউবার আছেন যারা আগে এক ভাষায় কথা বলত, এখন সুর পাল্টিয়ে কথা বলছে। তাদের সবার সম্মিলিতভাব দেখে মনে হচ্ছে, সরকারে আছে বিএনপি। সবাই একজোট হয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে। এসব কার্যক্রমকে ইতিবাচকভাবেও নেওয়া যায়। সবাই ভাবছে, বিএনপি ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। এ জন্য একজোট হয়ে চেষ্টা করছে বিএনপি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নতুন দল হিসেবে এনসিপিকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
গয়েশ্বর : তাদের চাকচিক্যময় ও ব্যয়বহুল রাজনৈতিক পথচলা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। টাকা কোথায় পাচ্ছে- প্রশ্ন করলে এমনভাবে উত্তর দিচ্ছে যে, এগুলো গায়েবি টাকা; আল্লাহ দিয়েছে।
ওদের বয়স কম, আবেগ বেশি। এখন ওরা বিবেক তাড়িত নয়। যখন বিবেক বোধ জাগ্রত হবে তখন ওদের রাজনৈতিক ভাষার মধ্যেও পরিবর্তন আসবে। সম্প্রতি তারা জানিয়েছে, দলের জন্য ১৩৯ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে। ৩৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। স্বচ্ছতা প্রদর্শনের জন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু অনুদান যারা দিয়েছে তাদের তালিকাটা প্রকাশ করলে আরও ভালো হতো। অনুদানকারীদের আমরা স্যালুট জানাতে পারতাম আমাদের নবীন রাজনীতিবিদদের সহযোগিতা করার জন্য।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
গয়েশ্বর : এটা সরকারের তরফ থেকে একটা ইতিবাচক ও সাহসী পদক্ষেপ। এমন পদক্ষেপের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিভিন্ন মহল থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠছে। আপনি কী মনে করেন?
গয়েশ্বর : কথায় আছে- পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর। আওয়ামী লীগের পাপী যারা আছে দেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে। কিন্তু দল নিষিদ্ধের ঘোষণা সুফল বয়ে আনবে না। অতীতে অনেক ছোটবড় নামকরা রাজনৈতিক দল ছিল যারা এখন বিলীন হয়ে গেছে। জনবিরোধী কাজের জন্য তাদের নিষিদ্ধ করতে হয়নি, জনবিচ্ছিন্ন দল হওয়ায় জনগণই তাদের খারিজ করে দিয়েছে। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সমাধান হয় না। এটার সমাধান করতে হবে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সরকারের আট মাসের কার্যক্রমকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
গয়েশ্বর : অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন। এই নির্বাচনটা কখন হবে তা নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তারা এখনো দিতে পারেনি। নির্বাচন নিয়ে জাতি একটা ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। এমন নয় যে, তারা নির্বাচন দেবে না। কিন্তু স্পষ্ট করছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোট দেওয়া নিয়ে যে উত্তেজনা ছিল তা এখন আর নেই। তারাও কনফিউজড হয়ে গেছে। সরকার গঠিত সংস্থার কমিশনের রিপোর্টগুলো পড়েছি। সেগুলো পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। অনেক রিপোর্ট আছে বাস্তবতা বিবর্জিত। শুধু কল্পনার জগতেই সম্ভব। জাতি এতদিন একটা অব্যবস্থাকে ব্যবস্থা মনে করে চলেছে। সঠিক ব্যবস্থায় আনতে গেলে প্রথম প্রথম অনেকেই হিমশিম খাবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচন প্রশ্নে এই ধোঁয়াশা কাটিয়ে স্বচ্ছতা আনার উপায় কী?
গয়েশ্বর : ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যদি স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করতে চায় তবে তাদের উচিত অস্পষ্টতা কাটিয়ে জাতিকে আলোর পথে নিয়ে আসা। নির্বাচন কখন হবে তা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া উচিত। আমরা ততদিন অপেক্ষা করব। আর নির্বাচনের সময় নিয়ে যারা এই ধোঁয়াশা তৈরি করছেন তাদের জালে যেন সরকার আটকা না পড়ে সেই কামনা করব। অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে একটা সুস্পষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ সরকারকেও সাহায্য করবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সরকারের প্রতি বিএনপির প্রত্যাশা কী?
গয়েশ্বর : প্রত্যাশা যাই থাকুক, বিএনপির প্রত্যাশা পূরণের জন্য তো এ সরকার গঠিত হয়নি। জনগণ দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেনি। দিনের ভোট রাতে হয়েছে। ভোট ছাড়াই সরকার গঠনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ভোট দেওয়ার জন্য জনগণের যে আকুতি বিএনপিরও তাই। জনগণ যদি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করে তবে তাই সই।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার তিন মাসের জন্য শুল্কারোপ স্থগিত রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তিন মাস পর এই শুল্ক যদি বহাল থাকে তাহলে আমাদের দেশে এই শুল্কারোপের প্রভাবটা কেমন হবে? করণীয় কী?
গয়েশ্বর : তিন মাস স্থগিত করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশে আমেরিকান ক্রেতা যারা আছেন এই অতিরিক্ত শুল্ক পরিশোধ করে তারা কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে পারবে এবং সেই পণ্য বিক্রি করে তারা তাদের মার্কেট থেকে কতটুকু লাভবান হতে পারবে তার ওপর এই শুল্কারোপের প্রভাব নির্ভর করবে। এই সংকট উত্তরণে সরকারকে পুরো বাণিজ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : অসংখ্য ধন্যবাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সময় দেওয়ার জন্য।
গয়েশ্বর : বাংলাদেশ প্রতিদিনকেও ধন্যবাদ।