শেষ হলো চার দিনের বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গতকাল সম্মেলনের শেষ দিনে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বিদেশি বিনিয়োগের পাইপলাইন প্রস্তুত হয়ে গেছে। তৈরি পোশাক, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তারা আমলাতান্ত্রিকতাসহ কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত যোগাযোগ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আগামী ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও প্রতিশ্রুতিগুলোকে বাস্তবে পরিণত করাই পরবর্তী লক্ষ্য।
বিনিয়োগ সম্মেলনের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন বিডার ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রচি। এ সময় বিডার মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অনুবিভাগের নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মহাপরিচালক দয়ানন্দ দেবনাথ এবং প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে নাহিয়ান রহমান বলেন, সম্মেলনে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি চার শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে চীনা আরএমজি প্রতিষ্ঠান হান্ডার সঙ্গে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘শপআপ’ ১১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। তবে সম্মেলনে মোট কী পরিমাণ বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেছে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামী সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
বিনিয়োগের বাধা প্রসঙ্গে বিডার এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা কয়েকটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছেন। যেমন নীতির ধারাবাহিকতা, অ্যাকসেস টু রিসোর্স ও দুর্নীতির চ্যালেঞ্জ প্রভৃতি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অবসান চান বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু এনবিআর নয়, সরকারি সব সেবায় ধীরগতি আছে। এই দাপ্তরিক ভোগান্তি দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের উদ্যোগ নিচ্ছি। এনবিআরের আমলাতান্ত্রিকতা দূর করতে গ্রিন চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। অন্য সরকারি দপ্তরের জন্যও ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য মসৃণ পথ তৈরি করতে সবকিছু করা হচ্ছে। বিনিয়োগকে বাস্তবে রূপ দিতে সম্মেলনের ফলোআপ করা হবে। একটি বিনিয়োগ আসতে ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় লাগে। এই সময়ের জন্য আমরা একটা রোডম্যাপ করে বিদেশি বিনিয়োগকারী যারা এসেছেন, তাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধরে ধরে যোগাযোগ করা হবে।’
নাহিয়ান বলেন, ‘এবার আমরা সম্মেলনে সেমিনার, বক্তৃতা কম রেখেছিলাম। স্পট ভিজিট, ম্যাচমেকিং- এসব বাস্তবধর্মী কর্মকাণ্ডে জোর দিয়েছি। সম্মেলনের প্রথম দুই দিনে বিনিয়োগকারীদের আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো নিয়ে সরেজমিন বিনিয়োগ অবকাঠামো ও সুযোগসুবিধা দেখানো হয়েছে, পরের দিন বাংলাদেশে বিনিয়োগের ভিশন অর্জনে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছি তা তুলে ধরা হয়েছে।’ শেষ দিনে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অগ্রাধিকার খাতগুলো নিয়ে ব্রেকআউট সেশন আয়োজন করা হয়। প্রতিটা সেশনের পরে দেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়।
অন্য বছরের তুলনায় এ বছরের সম্মেলনের পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে শাহ মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, ‘এবার সংশ্লিষ্ট সরকারি সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ছাদের নিচে হাজির করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা কোনো কিছু জানতে চাইলে সরাসরি কথা বলতে পেরেছেন। অন্যান্যবার তারা সামিটে এসে কথা বলার লোক পান না। দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এবারের সামিটের সবকিছু আমরা ট্র্যাক করব।’