দূর থেকে দেখলে মনে হবে দু’হাতে বড় দু'খানি পাথর ধরে আছে কেউ। কাছে গিয়ে দেখলে যে কারো চোখ কপালে উঠবে! কারণ, সেগুলো আসলে পাথর নয়, হাতের দুই পাঞ্জা! পাঞ্জার মালিকের নাম ডুয়াংজে সামাকসামাম। থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের এই নারী একটি খাবারের দোকানের মালিক। ধারণা করা হচ্ছে, তার দুই পাঞ্জাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড়।
তবে রেকর্ড হোক আর নাই হোক, তিনি একটি দুর্লভ ও যন্ত্রণাদায়ক রোগে আক্রান্ত। স্থায়ীভাবে তার মাংসপেশীগুলো ফুলে এই দশা।
বিশেষজ্ঞদের মত, পৃথিবীতে ডুয়াংজেই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি এই জটিল রোগে ভুগছ্নে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় রোগটির নাম মাইক্রোডাইস্ট্রোফিয়া লিপোমাসটোসা। এ রোগে কাঁধ থেকে দুই হাতের আঙুল অব্দি স্থায়ীভাবে ফুলে যায়। হাত নড়াচড়া থেকে শুরু করে কাজে-কর্ম ভীষণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
শৈশব থেকেই এ রোগে ভুগছেন তিনি। জানা যায়, জীবনের প্রথম ২০ বছর লজ্জায় তিনি বাড়ি থেকে বের হননি! এমনকি তিনি কোনোদিন স্কুলেও যান নি। তবে জীবনের তাগিদে শেষ পর্যন্ত বের না হয়েও পারেননি। পরিবারের খাবারের দোকান চালিয়েই চলছে তার বর্তমান জীবন।
ডুয়াংজে বলেন, 'আমার হাত এত ভারী যে আমি চুল আঁচড়াতে বা চুলে শ্যাম্পু করতে পারি না। কাজ করাও বেশ কঠিন হয়ে যায়। কাপড়-চোপড় পরাও বেশ কষ্টের।'
দুর্লভ এ রোগের তেমন কার্যকরী চিকিৎসাও নেই। ‘বেশ কিছু ডাক্তার সমাধান হিসেবে হাত দু’টি কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আমি তা করিনি’, জানান ডুয়াংজে।
তবে এটাও ঠিক, প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওটার কারণে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। একই মত গ্রামবাসীরও, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ শিক্ষা, চিকিৎসায় অনেক পিছিয়ে তাদের গ্রামটি।
ডুয়াংজে জানান, হাতের এ জটিল দশায় মাঝে মধ্যেই ছুরি-কাঁচির নিচে যেতে হয় তাকে। মাসখানেক আগেও অস্ত্রোপচার করে প্রায় ৭০০ গ্রাম মতো অতিরিক্ত চর্বি ও রক্ত বের করা হয়। কিন্তু মাস ঘুরতেই আবার যা তাই!
সম্প্রতি জাপানের কিটাসাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডাক্তারকে দেখান তিনি। এমআরআই স্ক্যানের পর মাইক্রোডাইস্ট্রোফিয়া লিপোমাসটোসার রোগের কথা নিশ্চিত করেন তিনি।
তার দুই হাতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্লাস্টিক সার্জন ড. এইজু উচিনুমার মত, তার এ রোগটি বেশ দুর্লভ। দিনকে দিন এটা খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এর সঠিক চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে নেই।