বর্তমানে স্মার্টফোন ছাড়া কিছু চিন্তাই করা যায় না। কারণ, প্রতিদিন স্মার্টফোন প্রযুক্তি মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বদলে দিচ্ছে সমাজকে। আগে ছবি তুলতে অপরের সাহায্য লাগত। এখন আর লাগে না। প্রযুক্তি নিজের ছবি নিজেই তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। সুতরাং, তা জনপ্রিয়ও হয়েছে। তাই এখন 'সেলফি' বর্তমান সময়ের অন্যতম হালের ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। এমন দাবিকে নিশ্চয়ই কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
স্মার্টফোন দিয়ে প্রযুক্তিগত প্রায় সব কাজই এখন করা যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গোটা বিশ্বের একটা বড় অংশ স্মার্টফোনে সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিশেষ করে ফেসবুকে দিনের একটা বড় সময় কাটান। আর অনেকটা সময় ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকেন। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি হল, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার ও অপব্যবহার ধীরে ধীরে মানসিক রোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু দিন আগেই আবিষ্কার হওয়া তেমনি একটি রোগ ‘সেলফাইটিস।’
অনেকেই নিজের স্মার্টফোনটি দিয়ে সারা দিনই নিজের সেলফি তোলায় ব্যস্ত থাকেন। তাঁরা নিজেরাও জানেন না, এই সেলফির নেশা এক সময়ে মাদকের নেশার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। সেলফি তোলা আর তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ তথ্য। যাঁরা বেশি সেলফি তোলেন, তাঁরা মূলত এই সেলফিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার জন্য এক ধরনের পাগলামি করতে থাকেন।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)-এর একদল গবেষক তাঁদের গবেষণা শেষে জানিয়েছেন, 'সেলফি তোলা একটি মানসিক রোগ। এই গবেষক দলই সেলফিতে আক্রান্ত হওয়া রোগের নাম দিয়েছেন সেলফাইটিস (Selfitis)। তাঁরা আরও উল্লেখ করেন, এই সেলফাইটিস রোগের তিনটি ধাপ'।
বর্ডার লাইন সেলফাইটিস: এই ধাপে আক্রান্তরা দিনে অন্তত তিনটি সেলফি তোলেন এবং তা নিজের কাছেই রেখে দেন। কোনও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন না।
আকিউট সেলফাইটিস: এই ধাপে আক্রান্তরা দিনে অন্তত তিনটি সেলফি তোলেন এবং তিনটি ছবিই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।
ক্রনিক সেলফাইটিস: এই ধাপে আক্রান্তরা সারাদিনে নিয়ন্ত্রণহীন তাড়না বা ইচ্ছা থেকে বিরামহীনভাবে যখন তখন সেলফি তোলেন এবং দিনে অন্তত ছ’টি সেলফি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।
অন্যদিকে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যাঁরা খুব বেশি সেলফি তোলেন তারা সামাজিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয় প্রকাশ করেন। তাঁরা আরও বলেন, সেলফিতে আক্রান্তদের বেশিরভাগই কর্মজীবনে ও ব্যক্তিজীবনে ব্যর্থতার পরিচয় দেন এবং সাধারণদের চেয়ে তাঁদের কনফিডেন্স লেভেলও কম থাকে। তাই তাঁরা অনেক সময়ে হতাশা বা মেন্টাল ডিপ্রেসনে আক্রান্ত হন। তাই যাঁদের খুব বেশি সেলফি তুলতে ইচ্ছা হয় ও যাঁরা খুব বেশি সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকেন, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
তাই, অতিরিক্ত সেলফি তোলা থেকে নিজে বিরত থাকুন ও অন্যকেও বিরত থাকতে পরামর্শ দিন।
বিডি-প্রতিদিন/তাফসীর