ঘটনাটি ঘোতেছে ভারতের গোয়াতে৷ সাতটি রাজ্যের পুলিশকে একদল 'টেক স্যাভি' তস্করের দল ফেলে দিয়েছে মহা দুশ্চিন্তায়৷ তাদের ফেসবুক প্রীতি সমস্যার মধ্যে ফেলছে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিকেও৷ বিশেষ করে তাদের, যারা একদিনের জন্য মন্দারমণি গেলেও ফেসবুকে বড় বড় করে আপডেট দিতে চান, 'অফ টু মন্দারমণি ফর টোয়েন্টিফোর আওয়ার্স'৷
চুরি করার জন্য যেখানে এক ঘন্টাই যথেষ্ট, সেখানে যদি ২৪ ঘণ্টা পাওয়া যায় তাহলে তো সব কিছু সাফ করার জন্য এটি অঢেল সময়৷ তার জন্য যেটা করতে হবে তা হল, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ঘেঁটে শুধু খুজে বের করতে হবে সেই ব্যক্তির ঠিকানা, যিনি সপরিবারে বাইরে গিয়েছেন ছুটি কাটাতে৷
দেশটির পুলিশ সূত্র থেকে জানা যায় যে, সমস্যাটা মূলত গোড়ায়৷ এখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের যুগে অতি উত্সাহী মানুষেরা কোথাও বেড়াতে যাওয়ার একমাস আগে থেকেই ফেসবুক বা টুইটারে সেই যাত্রার ঘোষণা করে দেন কতদিনের জন্য কোথায় বেড়াতে যাচ্ছেন৷ আর যাওয়ার সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আপডেট দেওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়৷ শুধু এতে থামলেও চলত৷ কিন্ত্ত উত্সাহীরা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে পরিবারের সবার সঙ্গে হাসিমুখে তোলা ছবি আপলোড করতে থাকেন৷ আর ওই 'আপডেট' দেখেই সেই ব্যক্তির বাড়ি 'সাফ' করার কাজে নামত গোয়ার পানাজিতে ধরা পড়া সেই চোরের দল৷ যারা কলকাতা-সহ আরও ছ'টি জায়গায় পুরো বাড়ি 'সাফাই'য়ের কাজও করেছে নিপুণতার সঙ্গে৷
জড়িতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, দলটির প্রত্যেক সদস্যর নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে৷ বিভিন্ন শহরের কয়েক হাজার বাসিন্দা তাদের ফ্রেন্ডলিস্টে রয়েছেন৷ এই বিরাট চেনের মাধ্যমেই তারা সারা বছর ধরে জানতে পারে কোন শহরের কোথায় কে কোন জায়গায় গিয়েছে৷ এ বার তাদের কর্মকাণ্ড শুরু হয়৷ ধরা যাক, এই দলটি ঢাকুরিয়ার কোনও অভিজাত পরিবারের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার হদিশ পেয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে তারা বাড়ির কোনও সদস্যের প্রোফাইলে গিয়ে দেখবে সেখানে তাঁর ফোন নম্বর দেওয়া আছে কি না৷ যদি দেওয়া থাকে তবে তাকে ফোন করে কোনও সংস্থার নাম করে বলা হবে, আপনার নামে একটি চিঠি এসেছে৷ সেটি পৌঁছতে যেতে হবে, কাজেই ঠিকানাটা বলুন৷ বেড়ানোর মুডে থাকা ওই সদস্য কোনও রকম প্রশ্ন না করেই নিজেদের ঠিকানা বলে দেন৷ এর পর কাছাকাছি কোনও শহরের দল চলে আসে ওই ঠিকানায়৷ একদিন ধরে চলে এদের রেইকি করা৷ এর পর আসল কাজ৷ চুরি-ডাকাতি করে ওই শহর ছেড়ে ফের অন্য শহরে ডেরা বাঁধা৷
পুলিশ জানতে পেরেছে এদের প্ল্যান বি-ও থাকে নিজেদের মগজে পোরা৷ যেমন, ফোন নম্বর ফেসবুকে না পেলে তারা ওই পরিবারের কোনও সদস্যের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা কাউকে বার্তা পাঠান, ওরা বাইরে গিয়েছেন৷ কিন্ত্ত আমার প্রয়োজন, তাই ওদের ঠিকানা বা নম্বর দিলে খুশি হব৷ এ ক্ষেত্রেও কেউ তা সন্দেহের চোখে দেখে না৷ সহজেই পাওয়া যায় বাড়ির হদিশ৷
গোয়া পুলিশের বক্তব্য, এই দলটি রীতিমত ফ্লাইটে বা ট্রেনে যাতায়াত করে৷ এরা নজর রাখে কোন শহরে কখন লোকে বেড়াতে যাওয়া পছন্দ করে৷ রীতিমতো 'আপডেটেড' এদের ফেসবুক রিসার্চ টিমও৷ গত কয়েক বছরে প্রায় ১৫টি অপারেশন করেছে এই দলটি৷ পুলিশের ধারণা, যেখানেই এরা অপারেশন করুক, স্থানীয় দুষ্কৃতীরা সঙ্গ না দিলে বিষয়টি এত মসৃণ ভাবে হত না৷
পূজার ঠিক আগে বাঙালির বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতাও চিন্তা বাড়াচ্ছে পুলিশ কর্তাদের৷ কলকাতার গোয়েন্দা প্রধান জানিয়ে দিয়েছেন, 'বেড়াতে বারণ করছি না৷ কিন্ত্ত যাওয়ার আগে স্থানীয় থানায় নিজের বাড়ির ঠিকানা জানিয়ে গেলে আমাদের পক্ষে তা সুবিধাজনক হয়৷ তা ছাড়া যদি এই সব পোস্ট না দেওয়া হয়, তা হলেই ভাল৷'
তাই বেড়াতে যান নিশ্চিন্তে৷ কিন্তু তার কতটা আপডেট ফেসবুকে বা ইন্টারনেটে দিচ্ছেন?
বিডি-প্রতিদিন/তাফসীর