১৯৫০ সালে মার্কিন B-36 বম্বার বিমানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল একটি পরমাণু বোমা। তবে মাঝ আকাশে যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য মাঝ সমুদ্রে বোমাটি ফেলে প্লেনের সকল ক্রু লাফ দেন। ওই সময় ১৭ জনের মধ্যে ৫ জন প্রাণ হারান। প্লেনটি ক্র্যাশ করে। তিন বছর পরে প্লেনের ভাঙা অংশ খুঁজে পাওয়া গেলেও সেই বোমার হদিস মেলেনি। তবে অবশেষে বোধ হয় খোঁজ মিলেছে সেই হারিয়ে যাওয়া পরমাণু বোমাটির।
এর কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন শন স্মিরিচিনস্কি। ইনি কানাডার একজন প্রফেশনাল ডাইভার। গত মাসের শেষ দিকে সমুদ্রের নীচে সি কিউকাম্বার খুঁজতে নেমেছিলেন তিনি। সে সময় হঠাতই তার চোখে পড়ে বিরাট মাপের বোমার মতো একটা কিছুর উপর। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বোট থেকে বেশ খানিকটা দূরে চলে গিয়েছিলাম তখন। বেশ খানিকটা নীচেও ছিলাম। হঠাতই সমুদ্রের তলদেশে একটা বড় মাপের জিনিস চোখে পড়ে। আমি এর আগে সমুদ্রের নীচে এমন কোন জিনিস দেখিনি। দেখতে অনেকটা বিরাট মাপের গোল পাউরুটির মতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাকে বেগেল বলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ওটা একটা UFO। দ্রুত বোটে ফিরে গিয়ে সকলকে বলি যে এমন একটা জিনিস দেখেছি। এ অঞ্চলে বিশেষ একটা ডাইভিং হয়না, তাই হয়তো এটা আগে কারও নজরে আসেনি। আমার টিমের সকলেই দেখলেন, তবে কেউই বলতে পারল না এটা কী হতে পারে। পরে এ নিয়ে আলোচনার সময় এক বয়স্ক ভদ্রলোক আমায় বলেন এটা সেই ১৯৫০ সালে হারিয়ে যাওয়া পরমাণু বোমা হতে পারে। তার কাছ থেকেই পরে আমি প্লেন ক্র্যাশের কাহিনি শুনি।’
এই বোমাটি আসলে একটি ডামি পরমাণু বোমা ছিল। এতে প্লুটোনিয়ামের বদলে সীসা, ইউরেনিয়াম এবং TNT ব্যবহৃত হয়। তাই বলে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে এই বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা কম ছিল। রেডিয়েশন কম এবং বিস্ফোরণের পর সুদূর প্রসারী ক্ষতি না হলেও এই বোমা বিস্ফোরণ হলে বহু মানুষ মারা যেতেন। রেডিয়েশনের মাত্রাও থাকত যথেষ্ট।
শন সেই বৃদ্ধের দেওয়া খবর সম্পর্কে সন্দেহ দূর করতে ইন্টারনেটে বোমাটির ছবি দেখেন। তিনি বুঝতে পারেন, অনেকটা এমন ধরনের জিনিসই দেখেছেন। পরমাণু বোমা হতে পারে ভেবে তিনি সরাসরি কানাডার ন্যাশনাল ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রয়্যাল কানাডিয়ান নেভি-র একটি জাহাজ রওনা হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মেজর স্টিভ নেটা-কে। তিনি শনের তথ্য অনুযায়ী সেই বিমানের যাত্রা পথের নক্সা মিলিয়ে দেখেছেন যে, ওই পথ দিয়েই বিমানটি গিয়েছিল। তবে এ নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননি। আদৌ সেই হারিয়ে যাওয়া বোমা উদ্ধার হয় কিনা তা জানার জন্য আরও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/০৮ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল-১৩