‘আমরা সুদূর পরবাসে নিরাপদ থাকলেও পেট্রলবোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত স্বজনদের আর্তচিৎকারে আমরা ব্যথিত, শোকাহত এবং প্রচণ্ডভাবে ক্ষুব্ধ’ এমন উচ্চারণের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার একদল প্রবাসী ১৬ কোটি মানুষের প্রাণ ভিক্ষা চাইলেন সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে। একইসঙ্গে তারা রাজনীতির নামে পেট্রলবোমা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানান।
প্রবাসীরা বললেন, ‘আমরা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, শান্তি, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার আহবান জানাচ্ছি।’ ‘পুড়ছে মানুষ, জ্বলছে দেশ-রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যানারের সামনে শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রবাসীরা সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ভয়ংকর পরিস্থিতির আলোকপাত করে আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের জোর দাবি কালবিলম্ব না করে মানুষ পুড়িয়ে মারা বন্ধ করুন। গণহত্যা বন্ধ করুন। আমরা বিশ্বাস করি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকামী কোন মানুষ এবং দল এই রকম মানবতাবিরোধী কাজে অবতীর্ণ হতে পারে না।’
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনকালে সাংবাদিক শরীফ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘ সামরিক শাসনের আড়ালে এবং প্রশ্রয়ে দিনে দিনে সংগঠিত ও বেড়ে ওঠা ধর্মান্ধ সাম্প্রতিক শক্তি একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই চূড়ান্ত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করে তারা মরনপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। আর তাদের সন্ত্রাস ও পেট্রলবোমার বলি হয়ে সারাদেশের জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শতশত নিরীহ নিরপরাধ মানুষ। দেশ মাতৃকার এই মহাদুর্যোগের সময় কোন বিবেকবান ও দেশপ্রেমিক মানুষ বসে থাকতে পারে না। বিবেকের তাড়নায় এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা সুদূর এ প্রবাস থেকেই সরকারের কাছে আকুল আবেদন রাখছি, রাজনীতির নামে সন্ত্রাসে লিপ্তদের কঠোর হস্তে দমন করুন।’
সাংবাদিক ও সমাজকর্মী মুজাহিদ আনসারীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু এ সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মুহম্মদ উল্লাহ, চলচ্চিত্রকার কবীর আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক মিথুন আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর নেতা সুব্রত বিশ্বাস, সমাজকর্মী ও সাবেক সাংবাদিক নাসিমুন্নাহার নিনি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নেত্রী লুৎফুন্নাহার লতা, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্যবসায়ী সরাফ সরকার, আলী আহসান কিবরিয়া অনু প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিরীহ মানুষ হত্যার জন্যে যারা রেললাইন উপড়ে ফেলছে, চলন্ত বাস ও ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করছে, তারা কখনোই গণতান্ত্রিক রাজনীতির কর্মী হতে পারে না, ওরা সন্ত্রাসী। তাই ওদেরকে সেভাবেই হ্যান্ডেল করতে হবে। তবে সন্ত্রাসী নিমুর্লের নামে যাতে একজন নিরীহ মানুষও হয়রানির শিকার না হয় কিংবা ক্রসফায়ারে না যায়-সেদিকেও বিশেষ যত্নবান হতে হবে সরকারকে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে পেট্রলবোমা হামলা এবং নাশকতাকারী হিসেবে জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবিও জানানো হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫/ রশিদা