ক্লাসের একদম পেছনের দিকে বসেছিলো মেয়েটি। ইউসুফ তালুকদার আলগোছে সেখানে গিয়ে মেয়েটির জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে দেয়। মেয়েটির মুখোমুখি বসে জামার নিচের অংশ টেনে উপরে তোলার চেষ্টা করে। আতঙ্কিত মেয়েটি নিজের দুই পা জড়োসড়ো করে আড়ষ্ট হয়ে বসে। ইউসুফ তালুকদার তাকে ‘ঠিকঠাকমতো’ বসার চাপ দেয়। কিন্তু মেয়েটি নিজের দুপাকে জড়োসড়ো করেই থাকে। ইউসুফ তালুকদার মেয়েটির প্যান্টের জিপারে নিজের হাত ঘষতে শুরু করে।
মেয়েটি কনুই দিয়ে সেই হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। হঠাৎ আরেকজন শিক্ষার্থী ঘুরে এদিকে তাকাতেই উঠে পড়ে ইউসুফ তালুকদার। মেয়েটি নীরবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। ইউসুফ তালুকদার মেয়েটির নোটবুক এনে হাতে তুলে দেয়, যেখানে পেন্সিল দিয়ে লেখা রয়েছে 'ডোন্ট টেল এনিবডি' (কাউকে বলো না)।
যৌন অপরাধের দায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে আদালত যে রায় দিয়েছেন, সেখানে এভাবেই ইউসুফ তালুকদারের কুকীর্তির বিবরণ আছে। আর এই ঘটনা ঘটেছে ক্লাস চলাকালীন সময়েই বাঙালি মালিকানাধীন ঢাকা লার্নিং সেন্টারে। ইউসুফ তালুকদার সেই সেন্টারের প্রিন্সিপাল। যৌন অপরাধীদের সরকারি নথিতে তালিকাভুক্ত এবং দণ্ডিত ইউসুফ তালুকদার এখনো ঢাকা লার্নিং সেন্টার নামে তার প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বিপুল সংখ্যক বাঙালি ছেলে-মেয়ে সেখানে পড়তে যায়।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যৌন অপরাধী ইউসুফ তালুকদারের কুকীর্তি নতুন করে আলোচনায় আসে মূলধারার প্রভাবশালী পত্রিকা টরন্টো স্টারে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর। বুধবার টরন্টো স্টারের প্রথম পাতায় এই সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
আদালত তার রায়ে ইউসুফ তালুকদারের অপরাধের বিবরণ দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন, মেয়েটির যখন বারো বছর বয়স তখনই ইউসুফ তালুকদার মেয়েটির ব্রা’র স্ট্রিপের ওপর আঙুল ছুঁয়ে দিয়ে প্রশ্ন করতেন, 'এটা কি?' প্রশ্ন করার ছুতোঁয় হাতটা স্ট্র্যাপের সীমানা ধরে ঘুরতে থাকতো।
ইউসুফ তালুকদার কাউকে বলতে নিষেধ করলেও শেষ পর্যন্ত ঘটনা অভিভাবকদের জানিয়েছে মেয়েটি। পরের দিন যখন মেয়েটির মা এবং খালা ইউসুফ তালুকদারের মুখোমুখি হন, তিনি তাদের বলেন, 'আমি খুবই খারাপ ব্যবহার করেছি এবং কাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি।' তালুকদার ঘটনাটি প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন,'আপনারা বরং আমাকে মারেন, তবু ঘটনাটি কাউকে বলবেন না।'
কিন্তু ঘটনা যখন আদালতে গড়ায় ইউসুফ তালুকদার তার বক্তব্য থেকে এই অংশটুকু বাদ দিয়ে দেন। আদালত যৌন হয়রানির দায়ে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। ছেলেমেয়োরা থাকতে পারে এমন কোনো স্থানে বিশেষ করে, স্কুল, পার্ক খেলার মাঠে তার যাতায়ত নিষিদ্ধ করে। অবশ্য হাতে লেখা সংযোজনীতে বিচারক একই কক্ষে পূর্ণ বয়স্ক সুপারভাইজারের উপস্থিতি সাপেক্ষে ছেলেমেয়েদের উপস্থিতি আছে এমন স্থানে কাজ করার অনুমতি পায়।
২০০৫ সাল থেকে তারুকদার অন্টারিও কলেজ অব টিচার্স এর সদস্য। জেল থেকে বের হওয়ার তাকে ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে ডাকা হয়েছিলো। কিন্তু তালুকদার সেখানে যেতে অস্বীকৃতি জানান। যৌন অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার দায়ে তার শিক্ষকতার সনদ বাতিল করে দেওয়া হয়। যে কোনো পাবলিক স্কুলে তার শিক্ষকতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে ইউসুফ তালুকদার তার মালিকানাধীন ঢাকা লার্নিং সেন্টারে প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগ দেন।
টরন্টো স্টারের এক প্রশ্নের জবাবে এইপ্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ঢাকা লার্নিং সেন্টার বন্ধ করে দেওয়ার কথা আমি কখনোই ভাবিনি। কারণ আমি বাঙালি কমিউনিটিকে ‘হেল্প’ করছি।
যৌন অপরাধ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, আমি আসলে পড়াচ্ছিলাম। পড়ানোর সময় আমার শরীর ছাত্র-ছাত্রীদের গায়ে লাগতে পারে। কাজেই এটা নিয়ে একটা অভিযোগ হয়েছে। তুমি তো জানো, কানাডায় এগুলো একটা সমস্যা। কোনো একজন এখানকার বিষয় নিয়ে অভিযোগ করেছে। ইউসুফ তালুকদার বলেন, আর হ্যাঁ, টিনএজারদের নিয়ে কাজ করা আসলে খুব কঠিন। যে কেউ অভিযোগ করতে পারে।
ইউসুফ তালুকদারের কুকীর্তি নিয়ে টরন্টো স্টারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার এ নিয়ে কমিউনিটিতে তুমুল তোলপাড় তৈরি হয়। সামজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে অভিভাবকরা এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সূত্র: নতুনদেশ ডটকম
বিডি-প্রতিদিন/ ২৫ জুন, ২০১৫/ রশিদা