‘আমি প্রায়শ:ই লোকজনদের বলে থাকি- উল্লেখ করার মতো একটা নির্মান ত্রুটিসহ আমাকে তৈরি করা হয়েছিলো। আমাকে তৈরি করার সময় কোনো ‘ব্যাক গিয়ার’ সংযোজন করা হয়নি। ফলে আমি কেবলি সামনে যেতে জানি, পেছনে যেতে জানি না।‘-গত বছরের নভেম্বরে হাউজ অব কমন্সে দেওয়া বক্তৃতায় নিজেকে এভাবেই উপস্থাপন করেছিলেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির অত্যন্ত ক্ষমতাশালী এমপি ডিন ডেল ম্যাস্ট্রো।
ইশ্বর তাকে তৈরি করার সময় ‘ব্যাক গিয়ার’ই যে সংযোজন করেননি তা নয়, সম্ভবত ব্রেকও সংযোজন করতে ভুলে গিয়েছিলেন।নিদেনপক্ষে ‘স্টিয়ারিং’ থাকলেও হয়তো তাঁকে এখন কারাগারের বাসিন্দা হতো না। কানাডার ইতিহাসে তিনিই প্রথম সাবেক এমপি যাকে নির্বাচনী ভঙ্গের দায়ে জেলে যেতে হলো।
নির্বাচনী প্রচারনায় সীমা লংঘন করে ব্যয় এবং সেই ব্যয় লুকানোর দায়ে অন্টারিওর সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের আদালত এক মাসের কারাদন্ড দিয়েছে। আদালতের রায়ের পর পরই হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় পুলিশ ভ্যানে করে প্রভাবশালী এই রাজনীতিককে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে, উচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে এক মাস কাটানোর পর ডেল ম্যাস্ট্রোকে অন্য কয়েদীদের সঙ্গে আরো এক মাস জেল খাটতে হবে। পরবর্তী ৪ মাস থাকতে হবে গৃহবন্দী। সেই হিসেবে সাবেক এমপিকে বন্দী থাকতে হবে ৬ মাস। ৬ মাসের শাস্তি ভোগের পর তার জন্য রয়েছে ১৮ মাসের প্রবেশন। এই সময়ে কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে নিয়ন্ত্রিত চলাফেরা করতে হবে তাকে।
প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের সাবেক পার্লামেন্টারি সেক্রেটারী এবং সাবেক এই এমপি ২০০৮ সালের সাধারন নির্বাচনে নিয়ম ভঙ্গ করে দেদার টাকা উড়িয়েছিলেন তিনি। আইনে অনুমোদিত সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে বেশি ব্যয় করেছিলেন এবং সেটি তিনি লুকিয়েছিলেন।
তার অপরাধকে প্রতারনা হিসেবে অভিহিত করেছেন আদালত । রায় দিতে গিয়ে বিজারক লিসা ক্যামেরন বলেছেন, ব্যয় নিয়ন্ত্রিত থাকলে সেটি ২০০৮ সালের নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতো কী না সেটা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু বিচারের ক্ষেত্রে সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বিচারে প্রতারনাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রতারনা প্রতারনাই। নির্বাচনী প্রচারনায় তিনি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেছেন এবং সেটা তিনি জেনেশুনেই করেছেন।
বিচারক বলেন, তিনি শুধু আইনই ভঙ্গ করেননি, প্রতারনাও করেছেন। এই ধরনের মিথ্যা এবং প্রতারনা মারত্মক পরিণতি ডেকে আনে।ভবিষ্যতে রাজনীতিকদের এই ধরনের মিথ্যা এবং প্রতারনা করা থেকে বিরত রাখার জন্যই ডেল মেস্ট্রোকে জেলে যেতে হবে।
২০০৮ সালের সাধারন নির্বাচনে ভোটারদের কাছে নির্বাচনী প্রচারনা চালানোর জন্য তিনি একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ওই কোম্পানিকে তিনি ব্যক্তিগত চেকে ২১ হাজার ডলার পরিশোধ করেছেন।কিন্তু নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া ব্যয়ের হিসেবে তিনি এই অর্থব্যয়ের হিসাব দেখাননি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি প্রচারনায় ২ হাজার ডলার ব্যয় করার সীমাও তিনি অতিক্রম করেছেন। কিন্তু সেটিও তিনি কমিশনে দেওয়া হিসাবে উল্লেখ করেননি।
সূত্র: নতুন দেশ