মার্কিন সিনেটের লিডার চাক শ্যুমার, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়োর অঙ্গিকারের পরিপূরক কিছু না ঘটায় মেডেলিয়নের মালিক ট্যাক্সি ড্রাইভাররা অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে নিউইয়র্ক সিটি হলের সামনে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘটেও ঋণের দায় মিটিয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় বুধবার তারা অনশন শুরু করেন। বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লেখার সময় অনশনের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে দেখা যায় কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো করটেজ, সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিঙ্গারসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণকে।
নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্সের প্রধান নির্বাহী ভৈরবী দেশাই এবং বাংলাদেশী অর্গানাইজার টিপু সুলতান জানান, কায়েমী স্বার্থবাদী একটি গোষ্ঠির কারসাজিতে হঠাৎ করে ট্যাক্সি মেডেলিয়নের দাম হু হু করে বাড়ে। সে সময়েই কঠোর পরিশ্রমী ড্রাইভাররা আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের অভিপ্রায়ে চড়া মূল্যেই মেডেলিয়ন ক্রয় করেছেন। বাড়তি দামের স্থিতি স্থায়ী ছিল না। পুনরায় একেবারেই কমে গেছে। এর ফলে ব্যাংকের ঋণে ক্রয় করা মেডেলিয়ন মালিকরা পড়েছেন মহা-সংকটে। ২০১৮ সাল থেকে দেনার দায়ে জর্জরিত ৯ ট্যাক্সি ড্রাইভারের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবুও সিটির নীতি-নির্ধারকদের মানবিকতার দৃষ্টি প্রসারিত হয়নি। সে জন্য তখন থেকেই উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দায়গ্রস্ত মেডেলিয়ন মালিক ট্যাক্সি ড্রাইভারদের বাঁচাতে আন্দোলনের ডাক দেয় এই নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্স।
তারা কংগ্রেস, আইএমএফ, ঋণ প্রদানকারি সংস্থা, নিউইয়র্ক স্টেট রাজধানী এবং সিটি মেয়রের বাসা ও অফিসের সামনে র্যালি করেন। এক পর্যায়ে অবস্থার তাগিদে গত মার্চে সিটি মেয়র বিশেষ একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দেন দায়মুক্তির জন্য। এ খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৬৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু সেটি প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগন্য বলে ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্সের আন্দোলন থামেনি। হাজারো ঋণগ্রস্ত ক্যাবীর এ আন্দোলনকে যৌক্তিক অভিহিত করেছেন খেঁটে খাওয়া অভিবাসীগণের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পরিচিত কংগ্রেসওম্যান করটেজ। এর আগে সিনেটর চাক শ্যুমারও একই মনোভাব পোষণ করেন ক্যাবীদের কাছে গিয়ে।
সিটি মেয়রও বুধবার প্রায় একইধরনের মন্তব্য করলেও কার্যত: ফল পাচ্ছেন না ক্যাবীরা। অর্থাৎ যে মানুষগুলো নিজেদের জীবন বিপন্ন জেনেও করোনা মহামারিকালেও এই সিটিকে মোটামুটি সচল রাখতে অথবা অসহায় মানুষদের পাশে ছিলেন, সেই ক্যাবীরা বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কে অবহেলা-অবজ্ঞা-বঞ্চনার শিকার। দেনার দায় মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েও সমস্যার গভীরতা কর্ণকোহরে কেন পৌঁছে না সিটি ও ফেডারেল প্রশাসনের-সে প্রশ্ন অনশনে অংশগ্রহণকারীদের।
কেউ কেউ বলেছেন, আত্মহত্যার চেয়ে গণঅনশনে মারা গেলে হয়তো বেঁচে থাকা ক্যাবীরা ঋণের দায় থেকে মুক্তি পাবার একটি সুযোগ পাবেন।
অনশনরত বাংলাদেশি ট্যাক্সি ড্রাইভার জাহিদ ইসলাম (৪২) উচ্চ রক্তচাপের রোগী। প্রচন্ড ঝুঁকিতে রয়েছেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার। মেডেলিয়ন ক্রয়ের সময় যে ঋণ নিয়েছিলেন তার বড় একটি অংশ (৮ লাখ ডলার) এখনো অপরিশোধিত রয়েছে। জাহিদ বললেন, আমি আশা করছি সিটি প্রশাসন সদয় হবেন এবং সকল ট্যাক্সি ড্রাইভারের ঋণের দায়িত্ব সিটি মেয়র নেবেন অর্থাৎ ব্যাংকের সাথে এমন একটি সমঝোতা করা হবে যার মধ্যদিয়ে প্রতিমাসের কিস্তি ৮০০ ডলার করে হবে। নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাটর্নি জেনারেল টি জেমস, সিটির পাবলিক এডভোকেট স্কট স্ট্রিঙ্গার এবং ইউএস সিনেটের লিডার চাক শ্যুমার এ সমঝোতায় সাঁয় দিলেও সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো তা মানতে নারাজ। করোনা রিলিফ তহবিলে নিউইয়র্ক সিটির জন্য যে বরাদ্দ ছিল তা থেকে দায়গ্রস্ত ড্রাইভারকে ৯ হাজার ডলার থেকে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত এককালিন অনুদানের প্রস্তাব রয়েছে। এই অর্থ নিয়ে ঋণ প্রদানকারি ব্যাংকের সাথে বকেয়া পরিশোধের নতুন বন্দোবস্ত করার শর্ত রয়েছে। এজন্যে কেউই তা নেইনি। কারণ, সেটি ‘খাড়ার ওপর মরার ঘা’র মত হতে পারে।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে কর্মরত ট্যাক্সি ড্রাইভারের ৩০% এরও অধিক হলেন বাংলাদেশি। আর মোট ড্রাইভারের ৯০% অভিবাসী।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল