রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে এবার তার শাশুড়ি ও পরিবাবের অন্য সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ ওঠেছে। সেই সঙ্গে ভাষায় অপ্রকাশযোগ্য গালাগালি এবং নানা ধরনের মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে একটি অভিযোগপত্র ও কয়েকটি অডিও রেকর্ডিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দিয়েছে শাশুড়ি রোকেয়া বেগম।
বুধবার সকালে অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। এই প্রতিবেদকরে কাছেও অডিও রেকর্ডিংগুলো সংরক্ষিত রয়েছে।
তবে গত ৫-৬ বছর ধরে শিক্ষিকা রুখসানা পারভীন এই ধরনের কর্মকাণ্ড করে আসলেও কোনো ধরণের আইনের আশ্রয় নেননি তারা।
রুখসানা পারভীনের ননদ বলেন, রুখসানা পারভীন যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেই আমরা প্রথম অভিযোগ করলাম।
আর অভিযোগের বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের স্বামী বেলায়াতে হোসেনের দাবি, তার স্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই বিভাগের অন্য শিক্ষকরা এটা করিয়েছেন। পারিবারিক কলহের সুযোগ নিয়ে নিজেদের অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা তার পরিবারকে দিয়ে এ কাজ করাচ্ছে।
এদিকে লিখিত অভিযোগে শাশুড়ি রোকেয়া বেগম উল্লেখ করেছেন, ‘আমার একমাত্র পুত্র বেলায়েত হোসেনের (অ্যাডিশনাল এস.পি. বাংলাদেশ পুলিশ) সঙ্গে রুখসানা পারভীনের বিবাহের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এবং বর্তমানেও নানাভাবে আমাকে ও আমার পরিবারের অন্যদের চরমভাবে অপমান-অপদস্থ, অরুচিকর আচরণ এবং হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। তাদের বিবাহের পর থেকে রুখসানা পারভীন আমাকে প্রাণনাশের হুমকিসহ গালাগালি এবং নানা ধরনের মানসিক নির্যাতন করে আসছে। মোবাইল কথোপকথনে যেসব নোংরা ও অরুচিকর গালাগালি রয়েছে সেগুলো আপনার নিকট প্রমাণস্বরুপ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে পেশ করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তারা কী অভিযোগ দিয়েছে তা আমি জানি না। তারা যদি আমার পারিবারিক কোনো বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে থাকে তাহলে সেটা আমি পারিবারিকভাবে মোকাবেলা করব। তারা আমার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগই করুক না কেন, আমি তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। তবে সেটা অবশ্যই আমাকে আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। আর পারিবারিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কেন অভিযোগ করা হচ্ছে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’
এর আগে গত ২৭ জুলাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে তারই ১১ জন সহকর্মী বিভাগীয় সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। তারা রুখসানা পারভীন বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শ্রেণিকক্ষে এবং এর বাইরে শিক্ষকদের নামে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ আনেন।
অন্যদিকে ৩১ জুলাই রুখসানা পারভীনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাল্টা অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নামেও শিক্ষকরা মানহানিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। আমি প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়েছি। তদন্ত কমিটিও দাবি করেছি। তদন্ত কমিটি হলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে।’ এছাড়া তিনি ওই অভিযোগপত্রে বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগও আনেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘গত ২৬ এপ্রিল তিনি তার পিএইচডি সুপারভাইজার সেই অধ্যাপকের সঙ্গে গবেষণার কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেই। কারণ, সেই অধ্যাপক তাকে যৌন হয়রানি করেন, যা তার সহ্যের বাইরে চলে যায়। সুপারভাইজার বাদ দেওয়ায় সেই অধ্যাপক অন্যদের সঙ্গে জোট বেধে তাকে নানাভাবে হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন করছেন।’
তবে সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি তদন্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় রুখসানা পারভীনের অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। সেই সঙ্গে রুখসানা পারভীনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কারণ দর্শানোর আগেই নতুন করে রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো তার শাশুড়ি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। এটা তাদের পারিবারিক বিষয়ে অভিযোগপত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী কর্তপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন