দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো রহস্যজট খুলেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা রহস্যের। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও আলোচিত এই হত্যাকান্ডের নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি। পুলিশও গ্রেফতার করতে পারেনি এজাহারভুক্ত কোন আসামিকে। উল্টো মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি এ নিয়ে রহস্যজনক আচরণ করছে। মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ দিয়াজের পরিবার।
দিয়াজের বড়বোন জুবাইদা ছরওয়ার চৌধুরি নাপা অভিযোগ করেন, ‘আমার ভাইকে হত্যা করার দু'বছর হয়ে গেছে। আদালত আসামিদের গ্রেফতারি ফরোয়ানা জারি করেছে। কিন্তু প্রশাসন প্রকাশ্য দিবালোকে আসামীদের দেখেও গ্রেফতার করছেনা। এ বিষয়ে আমরা খুবই হতবাকক।’ তিনি বলেন,' আসামিদের গ্রেফতারে বিলম্ব হওয়ায় হত্যার আলামত নষ্ট হচ্ছে। আসামীদের গ্রেফতার করে জবানবন্দী নেওয়া না হলে এ ঘটনা প্রমাণ করা যাবে না।
দায়িত্ব অবহেলা ও তদন্তের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিইডির সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবো না।’
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট সংলগ্ন নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ। লাশ উদ্ধারের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আত্মহত্যা দাবি করা হলেও তা অস্বীকার করে আসছিল তার পরিবার। মৃত্যুর তিন দিন পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্তে 'আত্মহত্যা' উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তার ভিত্তিতে হাঠহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরের দিন ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরি বাদী হয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাএলীগের বর্তমান ও সাবেক ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। আসামি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনকেও। দিয়াজের মায়ের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়। এরপর দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। এজন্য তারা চট্টগ্রামে দিয়াজের লাশ উদ্ধারের স্থানে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে। এরপর গত বছরের ৩০ জুলাই দেওয়া দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উলেখ করা হয় 'দিয়াজের শরীরে হত্যার আলামত রয়েছে। এ প্রতিবেদনের পর দিয়াজের মায়ের করা এজাহার হত্যামামলা হিসেবে নিতে হাঠহাজারী থানার কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় আদালত। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট আদালত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনসহ মামলার সব আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ফরোয়ানা জারি করে একই সঙ্গে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
দিয়াজের অনুসারী ছাএলীগ নেতাদের অভিযোগ, 'আত্মহত্যার বদলে হত্যার বিষয়টি দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে স্পষ্ট হওয়ার পরেও এবং আদালতের গ্রেফতারি ফরোয়ানা থাকা সত্বেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করছে না। কিন্তু ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি লক্ষনীয়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার