ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়নের অংশ হিসেবে ছাত্রসংগঠনগুলো প্রশাসনের কাছে তাদের প্রস্তাবনা পেশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়ে লিখিত ও মৌখিক উভয়ভাবেই আচরণবিধির ব্যাপারে বক্তব্য জানায় তারা।
এর আগে, আচরণবিধি প্রণয়নের ব্যাপারে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে আচরণবিধির খসড়া সম্বলিত চিঠি পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আচরণবিধির ব্যাপারে তাদের মতামত বা সুপারিশ জানাতে অনুরোধ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের মতামত প্রশাসনের কাছে তুলে ধরে।
ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রস্তাবনাসমূহ:
আচরণবিধির ব্যাপারে ছাত্রলীগ তাদের বক্তব্য মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানায়।
এ ব্যাপারে সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা প্রোগ্রাম বা সোডাউন করার জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছ অনুমতির নেওয়ার সময়সীমা ৪৮ ঘন্টার পরিবর্তে ২৪ ঘন্টার পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছি। বলেছি, কোন দলই তাদের সাবেক নেতৃবৃন্দের দিয়ে কোনো ভাবেই প্রচার চালাতে পারবে না। কারণ তারা আসলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন ঘটবে। এছাড়াও দেয়াল লিখনের বিষয়টি এবং প্রচারণার সময় প্রয়োজনে আরও সীমিত করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমি মনে করি, প্রার্থীতার বিষয়টি সমাধান করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভাবে নির্বাচনী বিতর্ক সভা আয়োজন করতে পারে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ও সাবেক ডাকসু নেতাদের প্রচারণায় সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবনা জানিয়েছে জাতীয়বাদী ছাত্রদল। তাদের অন্যান্য প্রস্তাবনাগুলো হল, সভা-সমাবেশ করার অনুমতি সর্বোচ্চ ৪৮ ঘন্টা পূর্বে নেওয়ার বিধান শিথিল করা, গোপন বুথ ব্যতিত ভোটকেন্দ্র থেকে অবাধ প্রচারের মাধ্যম উন্মুক্ত রাখা প্রভৃতি।
গত ২৬ জানুয়ারি বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন তাদের মতামত প্রক্টর কার্যালয়ে পেশ করে। এতে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে সাংবাদিকদের ছবি তোলা ও ভিডিও করার ব্যবস্থা থাকা, সভা-সমাবেশ করার অনুমতি সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা পূর্বে নেওয়ার বিধান করা, প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ পোস্টারের সংখ্যা নির্ধারণ, নির্বাচনী ক্যাম্প ও রঙিন পোস্টার না করা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক ভোটারদের স্লিপ প্রদানের ব্যবস্থা করাসহ ১১ দফা প্রস্তাবনা জানায় তারা।
এছাড়াও, প্রচারণার সময় রাত ১২ টা পর্যন্ত বর্ধিত করা, সভা- সমাবেশের জন্য লিখিত অনুমতির বিধান বিলুপ্ত করা, পোস্টার ও লিফলেটের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা, গণচাঁদার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা ও কাস ক্যাম্পেইনের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাবনা জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট।
এদিকে, প্রশাসনের চিঠি না পেলেও বাংলাদশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য প্রশাসনকে জানায়। তারা ভোটগ্রহণের সময়সীমা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টার পরিবর্তে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৮টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা, ভোট কেন্দ্রে শিক্ষকদের সমন্বয়ে ৫ সদস্যবিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ কমিটি ও ভোটকেন্দ্র থেকে লাইভ সম্প্রচারসহ অবাধ প্রচারের মাধ্যম উন্মুক্ত রাখা প্রভৃতি প্রস্তাবনা পেশ করেছে।
উল্লেখ্য, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়নে গত ১৯ জানুয়ারি ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি ড. মো. আখতারুজ্জামান। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদের নেতৃত্বে ওই কমিটি আচরণবিধি প্রণয়নে কাজ করছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। আগামী মঙ্গলবার সিন্ডিকেটের সভা বসার কথা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার