রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের জামাতা ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) প্রভাষক এটিএম শাহেদ পারভেজ এর বিরুদ্ধে একাডেমিক কার্যক্রমে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
সেই অভিযোগ তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫৫ তম শিক্ষা পরিষদের সভায় এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির বিষয়টি সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত কমিটিতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইলিয়াছ হোসাইনকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, প্রভাষক শাহেদ পারভেজ শিক্ষা ছুটি না নিয়েই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। তার কাছে থাকা অনুষদের চতুর্থ ও পঞ্চম ব্যাচের পরীক্ষার খাতা তিনি মূল্যায়ন করে নম্বরপত্র অনুষদে জমা দেননি। সেকারণে নম্বরপত্র চেয়ে শাহেদ পারভেজের পরিবারের সঙ্গে অনুষদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। এরপর শাহেদ পারভেজের স্ত্রী ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানের কন্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক সানজানা সোবহান ওই দুই কোর্সের নম্বরপত্র অনুষদে জমা দেন। তবে সেই নম্বরপত্রে প্রভাষক শাহেদ পারভেজের স্বাক্ষর নেই। এছাড়াও এই দুই ব্যাচের ফাইনাল পরীক্ষার খাতাও মূল্যায়নের জন্য অনুষদ থেকে সংগ্রহ করেননি প্রভাষক শাহেদ পারভেজ। অন্যদিকে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রভাষক শাহেদ পারভেজ জমা দেননি। যার ফলে এই ব্যাচের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে পরীক্ষা পিছানোর নোটিশ দিয়েছে অনুষদ। এই দ্বিতীয় ব্যাচের ক্লাস অ্যাসেসমেন্ট মূল্যায়নের নম্বরপত্রও জমা দেননি প্রভাষক শাহেদ পারভেজ।
অনুষদ সূত্রে আরো জানা গেছে, ওই অনুষদের সান্ধ্যকালীন দুই শিক্ষার্থীর ইন্টার্নশিপের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে ছিলেন প্রভাষক শাহেদ পারভেজ। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া সেই দুই শিক্ষার্থীর দায়িত্ব পালন করছেন না তিনি।
এ বিষয়ে অনুষদের পরিচালক অধ্যাপক জিন্নাত আরা জানান, 'গত ২৮ ডিসেম্বর আমরা বোর্ড অফ গভর্নেন্সের সভা করেছি। সেই সভায় বিভিন্ন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। শাহেদ পারভেজ অনুষদ থেকে ছুটি না নিয়েই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এমনকি তিনি অনুষদের কাউকে কোন কিছুই জানাননি। আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।'
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ইলিয়াছ হোসেন জানান, 'প্রভাষক শাহেদ পারভেজ আইবিএ থেকে ছুটি না নিয়েই চলে যাওয়ায় আইবিএ কিছুটা বিপদে পড়েছে। শাহেদ পারভেজ নম্বরপত্র জমা না দেয়াসহ যে সব অন্যায় অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, সেসব অন্যায় অনিয়মের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংয়ের জন্য এই কমিটি হয়েছে। আমরা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং করে সুপারিশ সিন্ডিকেটে পাঠাবো। তারপর সিন্ডিকেট সেই সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবে।'
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রভাষক শাহেদ পারভেজ এর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
তবে অনুমতি না নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর প্রভাষক শাহেদ পারভেজের সঙ্গে গত ৫ নভেম্বর যোগাযোগ করা হয়।
সেই সময় তিনি বলেছিলেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মত নোংরা জায়গা থেকে বের হতে পেরে আমি খুশি। ইনশাল্লাহ সবার চেয়ে ভালো পজিশনে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার আগে আমি আরো ৬ টা ভালো চাকরি করেছি। শিক্ষকতা ছিলো আমার ৭ নাম্বার চাকরি। বেঁচে থাকলে আরো কয়টা চাকরি করি ইনশাল্লাহ জানতে পারবেন। কিছুদিন পর আমার স্ত্রীকেও ওই নোংরা জায়গা থেকে নিয়ে আসবো।'
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন